পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৮
আনন্দীবাঈ ইত্যাদি

আমরা বিশ্রামের উপযুক্ত জায়গা খুঁজছি, এমন সময় দেখতে পেলুম গাছের আড়ালে একটি সুন্দর ছোট বাংলা। আমরা একটু এগিয়ে যেতেই সেই বাংলা থেকে একটি অপূর্ব সুন্দরী বেরিয়ে এলেন। নিখুঁত গড়ন, খুব ফরসা, তবে নাক একটু খাঁদা, আর চোখ পটল-চেরা নয়, লংকা-চেরা বলা যেতে পারে। আমরা নমস্কার করে নিজেদের পরিচয় দিলুম। সুন্দরী জানালেন, তাঁর নাম মায়াবতী কুরুঞ্জি, এখন একলাই আছেন, তাঁর সঙ্গিনী মাসী-মা চাকরকে নিয়ে কিমাপুরের হাটে গেছেন। মায়াবতী খাঁটী বাংলাতেই কথা বললেন, তবে উচ্চারণে একটু আসামী টান টের পাওয়া গেল। তাঁর সাদর আহ্বানে কৃতার্থ হয়ে আমরা আতিথ্য স্বীকার করলুম।

 বলভদ্র মর্দরাজের ভঙ্গী দেখে বোঝা গেল সে প্রথম দর্শনেই প্রচণ্ড প্রেমে পড়েছে, তার কথার সুরে গদ্‌গদ ভাব ফুটে উঠেছে। আমাদের ভুটিয়া গাইড লাদেন গাম্পা চুপি চুপি আমাকে বলল, ওই মেমসাহেবটা ভাল নয়, পালিয়ে চলুন এখান থেকে। কিন্তু তার কথা কে গ্রাহ্য করে। বলভদ্র প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে আর আমিও মুগ্ধ হয়ে গেছি।

 মায়াবতী আমাদের খুব সৎকার করলেন। বললেন, আঠারো-শিঙা হরিণের সীজন এখন নয়, তারা শীতকালে পাহাড় থেকে নেমে আসে। মিস্টার মর্দরাজ আর মিস্টার চৌধুরী যদি দু মাস পরে আসেন তখন নিশ্চয় শিকার মিলবে। আমরা বহু ধন্যবাদ এবং আবার আসবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদায় নিলাম।

 পথে গোটাকতক পাখি মেরে আমরা কিমাপুর ডাকবাংলায় ফিরে এলুম। তার পর দিন বলভদ্র আবার মায়াবতীর কাছে গেল, শরীরটা একটু খারাপ হওয়ায় আমি বাংলাতেই রইলাম। অনেক বেলায় ফিরে এসে বলভদ্র বলল, শোন শীতলবাবু, আমি ওই মিস মায়াবতীকে বিয়ে করব, পনরো দিন পরে ওকে নিয়ে কলকাতায় যাব। তুমি কালই চলে