পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কাশীনাথের জন্মান্তর
৭৩

তবে আমাকেই তা রোধ করতে হবে। আমার ছেলেদের দিয়ে কিছু হবে না, তারা স্বার্থপর, নিজের ধান্দা নিয়েই ব্যস্ত। বয়স বেশী হলেও আমার শরীর এখনও শক্ত আছে। অতত্রব কৃপা করে আরও দশটি বৎসর আমাকে বাঁচতে দাও।

 কালীমাতা ভ্রূকুটি করে অন্তর্হিত হলেন।

 পরদিন প্রাতঃকালে কাশীনাথ সার্বভৌমের চতুর্থ পক্ষের পত্নী রাসেশ্বরী বললেন, আজ যে তোমার তিনটি প্রপৌত্রপুত্র আর পাঁচটি প্রদৌহিত্রপুত্রের অন্নপ্রাশন, তার হুঁশ আছে? তুমি চট করে স্নান আহ্নিক সেরে এস, তোমাকেই তো হোমযাগ করতে হবে।

 গঙ্গায় স্নান করে এসে কাতরকণ্ঠে কাশীনাথ বললেন, সর্বনাশ হয়েছে গিন্নী, কালসর্প— আমাকে দংশন করেছে, আমার মৃত্যু আসন্ন। মা করালবদনী, এ কি করলে, হায় হায়, সংকল্পিত কর্ম সমাপ্ত না হতেই আমাকে পরলোকে পাঠাচ্ছ!


শাস্ত্রে বলে, যার যেমন ভাবনা তার তেমনি সিদ্ধিলাভ হয়। কাশীনাথ যদি শ্রীরামপুরের পাদরীদের কবলে পড়ে খ্রীষ্টান হতেন তবে মৃত্যুর পর শেষবিচারের প্রতীক্ষায় তাঁকে সুদীর্ঘ কাল জড়ীভূত হয়ে থাকতে হত, সরীসৃপাদি যেমন শীতকালে থাকে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে তিনি অতি নিষ্ঠাবান হিন্দু ছিলেন, সেজন্য তাঁর পারলৌকিক পরিণাম অবিলম্বে সংঘটিত হল।

 মৃত্যুর পরেই কাশীনাথ উপলব্ধি করলেন, সক্ষম শরীর ধারণ করে শূন্যে অবস্থান করছেন, তাঁর প্রাণহীন দেহ অঙ্গনে তুলসীমঞ্চের সম্মুখে পড়ে আছে। তাঁর পত্নী আর আত্মীয়বর্গ চারিদিকে বিলাপ করছেন, প্রতিবেশীরা বলছেন, ওঃ, একটা ইন্দ্রপাত হল!