পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কাশীনাথের জন্মান্তর
৭৯

হলেও আপাতত আমার চাইতে অনেক ছোট, তোমার বয়স বোধ হয় ত্রিশ হবে, আর আমার হল গিয়ে ষাট। তোমার ইতিহাস আমি জানলুম, কিন্তু আর কাকেও ব’লো না, লোকে তোমাকে পাগল ভাববে। তুমি আমার জ্ঞাতি, ছেলেবেলায় তোমাদের পাড়াগাঁ থেকে এক সন্ন্যাসীর সঙ্গে পালিয়েছিলে, এখন সন্ন্যাসে অরুচি হওয়ায় আমার আশ্রয়ে এসেছ, এই তোমার পরিচয়। তুমি আমাকে বলবে কাকাবাবু, আমি তোমাকে বলব কাশী বাবাজী। তোমার সম্পত্তির কথা খবরদার কাকেও বলবে না, বুঝলে?

 কাশীনাথ বললেন, হাঁ, বুঝেছি। কিন্তু তোমার বাড়িতে আমি থাকব কি করে? তুমি তো দেখছি ম্লেচ্ছ হয়ে গেছ। পেঁয়াজের গন্ধ পাচ্ছি, পাশের জমিতে মুরগি চরছে। একটি প্রৌঢ়াকে দেখলুম, চটি জুতো পরে চটাং চটাং করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এল, ঘোমটা নেই, প্যাঁটপ্যাঁট করে আমার দিকে চাইল।

 —উনি তোমার কাকীমা।

 —ও, তা বেশ। কিন্তু স্ত্রীলোক জুতো পরে কেন? ঘোর কলি।

 —ঠিক বলছ বাবাজী, ঘোর কলি। এই কলিযুগের সঙ্গেই তোমাকে মানিয়ে চলতে হবে।

 — তুমি বোধ হয় মুসলমান বাবুর্চীর রান্না খাও? তা আমি মরে গেলেও খেতে পারব না।

 —না না, বাবুর্চী আছে বটে, কিন্তু মুসলমান নয়, হরিজন, জাতে চামার।

 —রাধামাধব! আমি স্বপাকে খাব, আজ শুধু ফলার। আমার থাকবার আলাদা ব্যবস্থা করে দাও।