পাতা:আনন্দী বাঈ - সখারাম গণেশ দেউস্কর.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম অধ্যায়
১১

বলা অনাবশ্যক যে, আনন্দী বাঈ তাঁহাকে যমের ন্যায় ভয় এবং লেখাপড়ায় যথাসাধ্য ঔদাস্য প্রকাশ করিতেন। সেখানে থাকিলে স্ত্রীর লেখাপড়া শিক্ষা হইবে না, ইহা বুঝিতে পারিয়া গোপাল রাও কর্ত্তৃপক্ষকে অনুরোধপূর্ব্বক আলিবাগে বদলি হইয়া গেলেন। আনন্দী বাঈর তত্ত্বাবধানের জন্য তাঁহার মাতামহীও নাতিনী-জামাইয়ের সঙ্গে আলিবাগে গমন করিলেন।

 সেখানে গিয়াও আনন্দী বাঈ লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করিলেন না। তিনি গোপাল রাওয়ের সম্মুখেই পুস্তক ও শ্লেট ছুড়িয়া ফেলিয়া দিতেন! গোপাল রাও স্ত্রীর এইরূপ অবাধ্যতা দেখিয়া অন্যবিধ নীতির অবলম্বন করিলেন। তিনি আদৌ রোষ প্রকাশ না করিয়া আনন্দী বাঈকে নানা প্রকার ক্রীড়া ও বিলাসের সামগ্রী আনিয়া দিলেন এবং বলিলেন, লেখাপড়া শিখিলে আরও অনেক জিনিষ আনিয়া দিবেন। এইরূপ প্রলোভন প্রদর্শন করায় বিশেষ সুফল ফলিল। আনন্দী বাঈ লেখাপড়ায় অল্পে অল্পে মনোযোগ করিতে লাগিলেন। তথাপি পড়িতে বসিলে পিঞ্জরগত নূতন শুকপক্ষীর ন্যায় তাঁহার অবস্থা হইত। অল্পকালমাত্র একস্থানে স্থির ভাবে বসিয়া থাকিলে তাহার প্রাণ ছটফট করিত। পড়া শেষ হইলে তিনি লম্ফপ্রদানপূর্ব্বক তাঁহার খেলিবার সঙ্গিনীগণের নিকট গমন করিতেন। কিন্তু তাঁহার বুদ্ধি অতীব তীক্ষ্ণ ছিল বলিয়া দুই চারিবার পাঠ করিলেই সমস্ত বিষয় তাহার আয়ত্ত হইত।

 বেশ-ভূষায় চাকচিক্য ও সৌষ্ঠবের প্রতি আনন্দী বাঈর বিশেষ দৃষ্টি থাকিত। গোপাল রাও ঠিক ইহার বিপরীত ভাবাপন্ন ছিলেন,