পাতা:আনন্দী বাঈ - সখারাম গণেশ দেউস্কর.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
আনন্দী বাঈ

তাহাকে ছুটি দিতে অসম্মত হওয়ায় তাঁহার সংকল্পে বাধা পড়িল। তথাপি গোপাল রাও বিচলিত হইলেন না। বহু চিন্তার পর তিনি একদিন সহসা আনন্দী বাঈকে বলিলেন,—“আমি দেখিতেছি, আর বৃথা সময় নষ্ট করায় কোনও ফল নাই। অতএব তুমি একাকিনী আমেরিকায় গমন কর। আমি কিছুদিন পরে তথায় উপস্থিত হইবার চেষ্টা করিব।”

 স্বামীর কথা শুনিয়া আনন্দী বাঈ বিস্মিত হইলেন। কিন্তু তাঁহার কোনও উত্তর-দানের পূর্ব্বেই গোপাল রাও বলিলেন,—“এ পর্য্যন্ত কোনও ব্রাহ্মণপত্নী একাকিনী বিদেশে গমন করেন নাই। অতএব তুমি এ বিষয়ে সকলের পথি-প্রদর্শিনী হও। স্বদেশীয় রীতিনীতির বিন্দুমাত্র পরিবর্ত্তন না করিয়া স্বীয় ব্যবহার-গুণে আমেরিকাবাসীকে হিন্দু রীতিনীতির পক্ষপাতী কর। স্ত্রীলোকের দ্বারা কোনও মহৎ কার্য্য সাধিত হয় না বলিয়া এদেশে যে প্রবাদ আছে, তুমি তাহা উপকথায় পরিণত কর। এদেশের অনেক সংস্কারক নারী জাতির মঙ্গলের জন্য বহুদিন হইতে মৌখিক আন্দোলন করিতেছেন, কিন্তু কার্য্যতঃ কাহারও দ্বারা কিছুই ঘটিয়া উঠিতেছে না। আমার ইচ্ছা, তুমি সেই দুষ্কর কার্য্য অংশতঃ সম্পাদন করিয়া সকলের উদাহরণ-স্থানীয়া হও।”

 স্বামীর উপদেশামৃত-সেচনের ফলে আনন্দী বাঈর হৃদয়ক্ষেত্রে স্বদেশ-হিতৈষণার বীজ ইতঃপূর্ব্বেই উপ্ত ও অঙ্কুরিত হইয়াছিল। এই কারণে স্বামীর এই আদেশ-শ্রবণ-মাত্র তিনি তাহাতে সম্মতি প্রকাশ করিলেন। ইহার পর ভাবী বিরহের ও বৈদেশিক দুঃখ-