পাতা:আনন্দী বাঈ - সখারাম গণেশ দেউস্কর.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় অধ্যায়
৩৯

হইলেন। কিন্তু তখন আর প্রত্যাবর্ত্তনের সময় ছিল না। সুতরাং তিনি আনন্দী বাইকে সতর্ক করিয়া দিয়া পরিশেষে বলিলেন,—“তুমি করুণাময় সর্বসাক্ষী পরমেশ্বরের উপর নির্ভর করিয়া থাকিও।”

 অতঃপর আর সেখানে দাঁড়াইতে না পারিয়া গোপাল রাও অশ্রুমোচন করিতে করিতে গৃহাভিমুখী হইলেন; এদিকে আনন্দী বাঈর নিরুদ্ধ শোকাবেগ তাঁহার স্ফুরদধর-নাসাপুটে উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিল। তিনি আর রোদন-সম্বরণ করিতে পারিলেন না। প্রবল অশ্রুধারায় তাহার গণ্ডস্থল প্লাবিত ও বস্ত্রাঞ্চল অভিষিক্ত হইল। ষ্টীমার যতক্ষণ দৃষ্টিপথের বহির্ভূত না হইল, ততক্ষণ তাঁহার অশ্রুপ্লত দৃষ্টি গোপাল রাওয়ের প্রতি স্থাপিত ছিল। গোপাল রাও অন্তর্হিত হইবার পরও বহুক্ষণ পর্যন্ত আনন্দী বাঈ চিত্রার্পিতার ন্যায় স্বামীর ধ্যানে নিমগ্ন ছিলেন!

 এইরূপে দেশের হিতকর কার্যে আপনার প্রাণের প্রতিমাকে বিসর্জ্জন করিয়া গোপাল রাও শূন্য হৃদয়ে গৃহে প্রত্যাবৃত্ত হইলেন। ইহার পর তাহার অবস্থা যেরূপ হইল, তাহা সীতা দেবীর নির্ব্বাসনকারী রামচন্দ্রের সহিত সম্পূর্ণরূপেই তুলনীয়। তিনি তিন মাসের ছুটী লইয়া সন্ন্যাসীর বেশে ভারতবর্ষের নানাস্থানে ভ্রমণ-পূর্ব্বক চিত্তকে শান্ত করিবার চেষ্টা করেন। সে সময়ে তাঁহার হৃদয় এরূপ শোকবিদ্ধ হইয়াছিল যে, তিনি কোনও স্থানে দুই দিনের অধিক অবস্থান করিতে পারেন নাই।