পাতা:আনন্দী বাঈ - সখারাম গণেশ দেউস্কর.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪
আনন্দী বাঈ

অবতীর্ণ হইলে সহজেই উভয়ের সাক্ষাৎকার ঘটে। তাঁহারা তথা হইতে বাস্পীয় শকটযোগে রোশেল অভিমুখে যাত্রা করেন। এই প্রথম সাক্ষাৎকার-কালে আনন্দী বাঈর ব্যবহার দেখিয়া শ্রীমতী কার্পেণ্টার নিম্নলিখিত মন্তব্য লিপিবদ্ধ করিয়াছিলেন,—

 আনন্দী বাঈ কখনও প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা কহেন না। তিনি নিতান্ত স্বল্পভাষিণীও নহেন। তাঁহার ন্যায় গাম্ভীর্য্য অনেক বর্ষীয়সী রমণীর চরিত্রেও দুর্লভ। এরূপ অল্প বয়সে এতাদৃশ গাম্ভীর্য্য অন্যত্র অসম্ভবপ্রায় বলিয়াই মনে হয়। আনন্দী বাঈর সহিত বন্দরে যখন আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়, তখন আমি মনে করিয়াছিলাম যে, তিনি অন্যান্য চপল প্রকৃতি বালিকার ন্যায় গাড়ীর জানালা হইতে মুখ বাহির করিয়া চতুর্দ্দিকে দৃষ্টিপাত করিবেন; অথবা প্রত্যেক নব দৃষ্ট পদার্থ-সম্বন্ধে নানা প্রকার প্রশ্ন করিয়া আমাকে বিরক্ত করিবেন। কিন্তু তিনি তাহার কিছুই করিলেন না। তিনি অতি গম্ভীরভাবে গাড়ীতে বসিয়াছিলেন। অনেকবার আমার মনে হইত যে, এইবার তিনি আমার প্রশ্ন না করিয়া থাকিতে পারিবেন না। কিন্তু তিনি আমায় কোনও বস্তুর সম্বন্ধে আদৌ কোন কথা জিজ্ঞাসা করিলেন না! তাঁহার বুদ্ধির স্থূলতা বা জিজ্ঞাসা-বৃত্তির অভাব যে ইহার কারণ নহে, তাহা বলাই বাহুল্য। তিনি পরে এ বিষয়ে যে সকল কথা আমায় বলিয়াছিলেন, তাহা হইতে আমি বুঝিলাম যে, তিনি অসাধারণ তীক্ষ্ণ বুদ্ধির প্রভাবে এই অজ্ঞাত-পূর্ব্ব দেশের অনেক ব্যাপারেরই কার্য্য-কারণ-সম্বন্ধ দৃষ্টিমাত্রেই বুঝিতে পারিয়াছিলেন।