পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আফগানিস্থান ভ্রমণ
৯৮

চুরি করে আনেন নি। হিন্দুমতে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। এ দুটিই তাদের ছেলে মেয়ে। তাঁর স্ত্রী বাঙালী, বলে তিনি বাঙালীকে ভালবাসেন। সুজলা সুফল বাঙলা দেশের একটি কোমল বধু শুষ্ক কর্কশ পাঠানকে স্বামীত্বে বরণ করে তাঁর গৃহকে আপন করে নিয়েছে কথাটা ভাবতেও মনে বিস্ময় লাগছিল।

 এটা হবার কথাই। ছোটবেলা থেকে আমরা মুসলিম বিদ্বেষী। হঠাৎ, মুসলিম প্রেম জেগে উঠবে কোথা হতে এটাই বোধহয় পাঠান মহাশয়ের মনে ছিল কিন্তু আমি যে পৃথিবীকে আমার করে নিয়েছিলাম তা কারো মনে জাগতে পারে না, কারণ এখনও পৃথিবীর নরনারী নিজের ইচ্ছা মত কিছুই করতেও পারে না।

 ছেলেমেয়েদের কাছে ডেকে নিয়ে এলাম। এবার তাদের একটু সাহস হয়েছে। তারা ভয় না করে আমার কাছে এল। কিন্তু দুঃখের বিষয় তাদের সংগে আমি কথা বলতে পারি নি। তারা জানত শুধু পোস্ত ভাষা। এ সময়ে লক্ষ্মী ঘরে এসে উপস্থিত হলেন। এবার তাঁর পরনে খাঁটি বাঙালী মেয়ের পোষাক। তার শাড়ি পরা দেখে আমার বেশ ভাল লাগল। দেখলাম পাঠানের চোখেমুখেও হাসি ফুটে উঠেছে।

 এবার পাঠান-স্বামী লক্ষ্মীর সংগে আমার পরিচয় করে দিলেন। তিনি ভাঙা ভাঙা বাঙলাতে স্ত্রীকে বললেন, ইনি তোমার দাদা, একে অভিবাদন কর। সত্যই লক্ষ্মী যখন বাঙালী মেয়ের মত আমার পায়ের কাছে প্রণাম করলেন তখন নিমিষে আমার মনে বাঙলা দেশের কল্যাণমণ্ডিত গৃহচ্ছবি ভেসে উঠল। লক্ষ্মীর মধ্যে যেন সমস্ত বাঙলাদেশ মূর্ত হয়ে উঠল। লক্ষ্মী আমার জন্য চা প্রস্তুত করবেন কি না ইতস্তত করছেন দেখে তাঁর পাঠান স্বামী হেসে উঠলেন। তিনি তাকে আশ্বাস দিয়ে চা বানাতে বললেন। লক্ষ্মী যত্ন সহকারে চা বানিয়ে রুটির সংগে চা দিলেন। তারপর তাঁর নিজের কথা বলতে লাগলেন।

 লক্ষ্মীর সংগে বাংলাতেই কথা বলছিলাম। পাঠানকে বললাম, “ভাই বাঙালী বোনের সংগে আমি নিজের ভাষায়ই কথা বলব। এতে তুমি নিশ্চয়ই দুঃখিত হবে