পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬
আফগানিস্থান ভ্রমণ

না। ঢাকার সেই মুসলমান ভদ্রলোককে লক্ষ্মীর মা দাদা বলে ডেকেছিলেন। এই পাতানো দাদাকে তিনি লক্ষ্মীর বিয়ের জন্য অনুরোধ করলেন। দাদা জানালেন তাঁর হাতে কলকাতায় একটি উপযুক্ত পাত্র আছে তাকে তিনি সংগে করে নিয়ে আসবেন। যথা সময়ে পাত্রকে সংগে করে মুসলমান ভদ্রলোকটি কলকাতায় উপস্থিত হলেন। পাত্রের চেহারা দেখে এবং ভাংগা কথা শুনে লক্ষ্মীর মায়ের সন্দেহ হল ভবিষ্যৎ জামাতা বাবাজী বাংগালী হিন্দু নয়। তাঁকে বলা হল যে পাত্র ছোট-বেলায় পেশোয়ারে ছিল। দুঃখিনীর মেয়ের বিয়ে, বেশি ভাবনা করার সময় ছিল না। হিন্দুমতে লক্ষ্মীর বিয়ে হয়ে গেল। পাত্র বললেন লক্ষ্মীকে নিয়ে তিনি ঢাকা যাচ্ছেন। কিন্তু ঢাকার পথ আর শেষ হয় না। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে অবশেষে পাঠানমুল্লুক কাবুলে এসে লক্ষ্মী প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করলেন।

 এই পর্যন্ত বলেই লক্ষ্মী স্বামীকে উদ্দেশ করে বললেন, লোকটি কিন্তু খারাপ নয়। আমাকে বিশেষ জ্বালাযন্ত্রণা দেয় নি। তবে প্রথম কিছুদিন অনভ্যস্ত জীবন-যাত্রার সংগে আপোষ করতে বেগ পেতে হয়েছিল। কি যে নিদারুণ কষ্টে আমায় দিন গিয়েছে। তারপর যতই দিন যাচ্ছিল ততই অদৃষ্টকে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছিলাম। এ দুটি ছেলেমেয়ে জন্মেছে এখন আমার বিশেষ কিছু কষ্ট নেই। কিন্তু এ দেশে থাকতে মোটেই আমার ইচ্ছা হয় না। আমরা কি দেশে গিয়ে হিন্দুসমাজে মেলামেশা করবার সুযোগ পাব?

 লক্ষ্মীর কথা শুনে স্থান কাল পাত্র ভুলে একেবারে তন্ময় হয়ে গিয়েছিলাম। তাঁর প্রশ্নে চমক ভাঙল।

 অত্যন্ত যত্ন সহকারে ভিন্ন ভিন্ন তরকারি রান্না করে লক্ষ্মী আমাকে খেতে দিলেন কিন্তু আমার ক্ষুধা তৃষ্ণা সবই দূর হয়ে গিয়েছিল। লক্ষ্মীর করুণ কাহিনী থেকে থেকে অন্তরে আঘাত করছিল। কোন রকমে খাওয়া শেষ করে সেদিনের মত বিদায় নিয়েছিলাম। তারপর যে কয়েকদিন কাবুলে ছিলাম