পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/১৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩০
আফগানিস্থান ভ্রমণ

এদের শরীরের গঠন ঠিক স্কচদের মতই। লম্বা লালমুখো লোকগুলি যেন চলতি দুনিয়ার কোন ধারই ধারে না। স্তরেমসে, নমস্কার, সেলাম আলেকম ইত্যাদি কোন শব্দই তাদের মুখে শুনলাম না। এরা যে ভাষা বলে তার একটা শব্দও আমার বোধগম্য হল না।

 গ্রামের কয়েকটি লোক বরফ পরিষ্কার করছিল এবং অদূরে কতকগুলি লোক একটা উটের মাংস ভাগাভাগি করছিল। ওদের সংগে মোটর ড্রাইভার ইরানি ভাষায় কথা বলছিল। ড্রাইভার আমাকে বুঝিয়ে দিলে, যদিও এরা হিন্দু বলেই পরিচয় দেয় তবুও হিন্দুস্থানের হিন্দুদের সংগে এদের কিছুই মিল নেই। এরা সকল জানোয়ারেরই মাংস খায়। এদের জাত কোন মতেই যায় না। এরা সকল সময়ই অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত থাকে এবং কারো হুকুম মেনে চলতে রাজি নয়। পাঠানদের সংগে এদের কোনরূপ লেনদেন নেই। ইচ্ছা হয় খাজনা দেয়, যদি ভাল না লাগল তো গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। কাবুলের মত স্থানের গরমও এরা সহ্য করতে পারে না। এরা পর্বতবাসী। কারো কাছে আজ পর্যন্ত মাথা নত করে নি। উপহাস করে ড্রাইভার বললে এদের মাঝে হিন্দুপ্রীতি জাগাবার চেষ্টা করে লাভ নেই। সুতরাং সেদিনই আমরা সেখান থেকে রওনা হয়ে সন্ধ্যার পূর্বেই একটি ছোট গ্রামে পৌছলাম। গ্রামে সরাই ছিল, সেখানেই রাত কাটাবার ব্যবস্থা হল।

 সরাইএ আসবার পর মনে হল যেন একটা খোঁয়াড়ে ঢুকেছি। চারিদিকে উটের অর্ধভুক্ত বিচালি এবং মলমূত্র বরফের সংগে মিশে জায়গাটাকে নরকে পরিণত করে তুলেছে। যে সকল লোক সরাইএ আশ্রয় নিয়েছিল তারা সবাই গরীব পাঠান। ওদের শীর্ণ মুখে পাণ্ডুর আভা। যে বস্ত্র সব পরে তারা শীত নিবারণ করছে তা অতি সামান্য। প্রত্যেকটি লোকের চোখেমুখে অসহায় ভাব। এরূপ লোকে ভরতি একটি ঘরের একাংশ দখল করলাম এবং সেই রাত্রি সেখানেই থাকতে বাধ্য হলাম। রাত্রে শুধু চা-রুটি খেয়েই থাকতে হল।