পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০
আফগানিস্থান ভ্রমণ

এনে দেবার পর অন্য হাঁড়ি হতে দু’ টুকরা মুরগীর মাংস বের করে নিলাম। এ-সব হোটেলে মুরগীটাকে মাত্র চার টুকরা করেই পাক করা হয়। দু’ টুকরা মুরগীর মাংস এবং দু’খানা পাঠান-রুটি অবলীলাক্রমে উদরস্থ করলাম।

 ভোজনের তৃপ্তি মুখেই ফুটে ওঠে। আমার মুখাবয়বে সেই তৃপ্তির ভাব ফুটে ওঠায় পাঠানও খুশী হয়েছিল। ভারতের এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত বেড়িয়ে অনুভব করেছি, ভোজন করিয়ে তৃপ্ত হতে অনেকেই চায়। বর্তমানে অভাবের তাড়নায় এই ভাবটি লোপ পেতে বসেছে। পাঠান যদিও পয়সা নিয়েই আমার কাছে খাদ্য বিক্রী করেছিল, তবুও তার মুখে আনন্দের দীপ্তি ফুটে উঠতে দেখে স্বভাবতঃই ভারতীয় কৃষ্টির কথা মনে পড়ল। বিদায় নেবার বেলা মাথায় টুপি রেখেই তাকে আমি যুক্তকরে নমস্কার করলাম। পাঠানও আমাকে নমস্কার বলে জোড়হাত করতে ভুলেনি। কিন্তু আমাদের আচারব্যবহারের কথা মনে হওয়ামাত্র মাথা নত হয়ে এল। অনেক দুঃখ হ’ল কিন্তু প্রতিবাদের উপায় ছিল না; ভাবছিলাম কবে স্বাধীন হব এবং পাঠানদের মত উদারচিত্তে উপবাসের দিনেও একজন পাঠানকে নিজের ঘরে বসিয়ে খাওয়াতে পারব।

 দোকান থেকে বেরিয়ে পথে দাঁড়ালাম; তারপর মাইল পাঁচেক যাবার পর দূর থেকে একটি টিলার উপর একটি বাংলো ধরণের বাড়ী দেখতে পেলাম। এদিকে পথ যদিও প্রশস্ত এবং সমতল, তবুও অযত্নের জন্য বড় বড় পাথর পথকে দুর্গম করে রেখেছে। খুব কষ্টে সাইকেল ঠেলে অগ্রসর হচ্ছি, এমন সময় একজন সেপাই আমাকে বাংলোয় যাবার জন্য ইংগিত করলে। বিনা বাক্যব্যয়ে তার অনুসরণ করলাম। বাংলোতে যাবার পর একজন অফিসার পরিষ্কার হিন্দুস্থানীতে আমার সঙ্গে কথা বলতে আরম্ভ করলেন। হিন্দুস্থানী ভাষা উর্দু ও নয় হিন্দিও নয়, এ দু’টার মাঝামাঝি। হিন্দুস্থানী রোমান অক্ষরে সাধারণত লেখা হয়; এই ভাষা ভবিষ্যতে রোমান অক্ষরে লিখিত হয়ে ইণ্ডিয়ার রাষ্ট্রভাষা হবে, এতে কোন সন্দেহ নাই।