পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আফগানিস্থান ভ্রমণ
৩৭

তার অন্তরের সঞ্চিত সকল কথা শিক্ষিত ছাত্রদের বলেছিল। মামুদের সকল কথা শোনার পর ছাত্রেরা তাকে বুঝিয়ে দেয়, এটা সামাজিক অত্যাচার, এই অত্যাচার হতে রক্ষা পেতে হলে সমাজের আমূল পরিবর্তন করতে হবে। মামুদ কখনও মনে করে নি, সন্মানিত পরিবারের কোন লোক তার প্রতি এত সহানুভূতি দেখাবে। সামান্য সহানুভূতি পেয়েই মামুদ অনেকটা শান্ত হয়েছিল। সন্মানিত লোকের কাছ থেকে সে কেন, তার বংশের কেহই সেরূপ সহানুভূতি পায় নি। বড় লোকের সংগে দরজির ছেলের কি সম্বন্ধ হতে পারে? শুক্রবারে নামাজের সময় মাত্র বড় লোকের সংগে নামাজ পড়তে দেখতে পায়, এর বেশি নয়।

 মামুদের মন ক্রমেই ছাত্রদের প্রতি আকৃষ্ট হতেছিল। সে কোরানের বয়েত ভাল করেই জানত, এবার সে অক্ষর পরিচয়ে মন দিল। চতুর লোক নিরক্ষরকে অক্ষর শিক্ষা দিতে সত্বরই সক্ষম হয়। মামুদ অক্ষর শিখে বই পাঠে মন দিল। যে সকল বই সে পড়তেছিল সেগুলি অন্য ধরনের।

 দুই মাস কারা জীবন কাটিয়ে মামুদ চলল তার আমিনার সংবাদ নিতে। পায়ে হাঁটা পথে মামুদের সাত দিন লেগেছিল বোখারায় পৌঁছতে। বোখারা পুনরায় বরফে ঢাকা পড়েছে। পথের দুদিকে জীব-জন্তুর কংকাল পড়ে ছিল। মামুদ আমিনার কথা যখনই ভাবছিল, তখনই অমঙ্গলের চিন্তা তাকে দমিয়ে দিচ্ছিল। অতিকষ্টে যখন সে আমিনার ঘরে পৌঁছিল, তখন দেখল ঘরের মেঝেতে কংকাল পড়ে আছে। আমিনার পায়ের জুতার একপাটি জুতা একদিকে এবং অন্যপাটি আরেক দিকে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। দু’খানা জুতাকেই সে হাতে নিয়ে দেখল তাতে রক্তের চাপ গাঢ় হয়ে রয়েছে। মামুদের কঠিন হাতের মুঠোর চাপে সেই জুতা থেকে জমাট বাধা কঠিন রক্তের টুকরোগুলি গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে মাটিতে ঝরে পড়ল। আমিনার যেটুকু অবশিষ্ট ছিল তাও গেল। মামুদ বুঝল তার আমিনা আর নেই। সমাজ-পরিত্যক্ত আমিনা ক্ষুধায় মরে নি,