পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮২
আফগানিস্থান ভ্রমণ

চাইতে গিয়েছি। পর্যটকের উপযুক্ত মর্যাদা দিতে দুনিয়ায় মানুষ আজও হয়ত কুষ্ঠিত কিন্তু এমন দিন নিশ্চয়ই আসবে যখন পৃথিবীর সংস্কৃতির ভাণ্ডারে তাদের অবদান যোগ্য-সমাদর লাভ করবে।

 পথ চলায় সময় হঠাৎ চোখের জ্যোতি কমে আসছিল। অন্ধ হয়ে যাচ্ছি বলে মনে হছিল। ভ্রমণ বোধ হয় এখানেই শেষ হতে চলল। মহা বিপদ। যারা ঈশ্বর আছে বলে কিছু বিশ্বাস করে তারা বেশ সুখী বলেই তখন মনে হল। তারা হয়তো এ অবস্থায় পড়ে ঈশ্বরের নাম নিয়ে কান্না জুড়ে দিত। কিন্তু আমার সে পথও বন্ধ। মাথার মাঝে চিন্তা-স্রোত বইছিল। সেই চিন্তাধারার গতি যে কত দ্রুত তা আমি বুঝিয়ে বলতে পারব না। ভাবছিলাম কি করে শরীরটাকে ধ্বংস করে এই দুঃসহ যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। হঠাৎ মনে হল সংগে কিছু বিষাক্ত দ্রব্য বা প্রাণঘাতী অস্ত্র থাকলে হয়তো বা তখনকার মনের অবস্থায় ভবলীলা সাংগ হতে দেরী হত না। কিন্তু হঠাৎ অন্ধ হয়ে যাবার কারণ কি? কেন চোখে দেখতে পাচ্ছি না? শীতের জন্য নয়তো? সেদিন তাপমান যন্ত্রে উত্তাপ-শূন্য ডিগ্রী হতে সতেরো ডিগ্রী নীচে নেমে গিয়েছিল। মনে হল প্রবল ঠাণ্ডাই চোখের জ্যোতি লোপ হবার একমাত্র কারণ। চোখ দুটাকে গরম করার জন্য দু'হাতে রাগড়িয়ে দিলাম। তারপর হাতের তেলা দুটোকে ঘসে গরম করে চোখে বার-বার লাগালাম। একটু একটু করে যদিও দৃষ্টি ফিরে আসছিল। কিন্তু এদিকে পা দুখানা অবশ হয়ে যাচ্ছিল। এরূপভাবে পা ঠাণ্ডা হয়ে অবশ হতে শুরু হলেই মনে করতে হবে মৃত্যু আসন্ন। ক্ষীণপ্রভ চক্ষুদুটি মেলে তাকালাম। সব কিছুই ঝাপসা দেখাচ্ছিল, মনে হল প্রায় কুড়ি হাত দূরে একটি চায়ের দোকান রয়েছে। এই দোকানে যেতে পারলেই আমার প্রাণ বাঁচবে। পা কিন্তু নাড়ছিল না। তখন চিৎকার করা ছাড়া আর উপায় ছিল না। চিৎকাৱ ক’রে লোক ডাকছিলাম। চিৎকার শুনে চায়ের দোকান হতে কয়েকজন পাঠান বেরিয়ে এসে আমাকে চায়ের দোকানে নিয়ে গিয়ে পায়ের জুতা খুলে ফেলে বরফ