পাতা:আমাদের জাতীয়ভাব - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[  ]

প্রভূতিগুণে বিভূষিত, তাহাদের সুরম্য সৌধসমাকীর্ণ নগর বিবিধ ভোগ্য বস্তুতে পরিপূর্ণ, তাহাদের আচারব্যবহার সর্ব্বথা পরিশুদ্ধ ও পরিমার্জ্জিত এবং তাহাদের ভাষা মন্দাকিনীর মৃত্যুতরঙ্গভঙ্গীজন্য কলনাদের ন্যায় শ্রুতিমধুর ও মনোমদ[১]।” গ্রীক পণ্ডিতগণ ইহা দেখিয়া হিন্দুদিগকে আপনাদের শিক্ষাগুরুর পদে প্রতিষ্ঠিত করেন। হিন্দুর সভ্যতা, হিন্দুর বিজ্ঞান, হিন্দুর দর্শন, ক্রমে গ্রীসে প্রচারিত হয়। বহু শত বৎসর পরে, ঐ জ্ঞানালোক অসভ্যভূমি ইঙ্গলণ্ড আলোকিত ও সভ্যতার শ্রীসম্পন্ন হইয়া উঠে। সেকন্দর শাহের আক্রমণে এইরূপে ভারতের সহিত ইউরোপের সংযোগ ঘটে। কে ভাবিয়াছিল, এই সংযোগে বহুযুগের পর ভারতের দশাবিপর্য্যয় ঘটিবে? যাহারা অমানুষভাবে জুলিয়স সীজরের বিস্ময় জন্মাইয়াছিল, কে ভাবিয়াছিল, তাহারা বহুযুগের পর সভ্যতাসম্পন্ন শ্রীসম্পন্ন ও শক্তিসম্পন্ন হইয়া, সভ্যতাজননী ভারতভূমির ভিক্ষাদাতা হইয়া উঠিবে? আর যাহারা এক সময়ে আচারব্যবহারে, ধনসম্পত্তিতে, শিল্পবিজ্ঞানে, গ্রীকদিগেরও বরণীয় ছিল, কে ভাবিয়ছিল, তাহারাই এখন জাতীয়ভাবে জলাঞ্জলি দিয়া, গ্রীসের শিষ্যস্থানীয় রোমের নির্জ্জিত, সেই ব্রিটিশ জাতির দ্বারে সর্ব্ববিষয়ে ভিক্ষাপ্রার্থী হইবে? কালের পরিবর্ত্তনে দুইটি বিভিন্ন জাতি এখন এইরূপ পরিবর্ত্তিত হইয়াছে। এক জাতির কিছুতেই তৃপ্তি হয় না, কিছুতেই সন্তোষ জন্মে না, এবং কিছুতেই ক্রিয়ার বিরতি ঘটে না। আর এক জাতির নিয়তই তৃপ্তি ও নিয়তই ক্রিয়ার বিরতি। সুতরাং এক জাতি নিত্য ক্রিয়ান্বিত, উদ্যমসম্পন্ন ও চিরনিদ্রাহীন, আর এক জাতি ক্রিয়াশূন্য, আলস্যমগ্ন ও চিরনিদ্রাভিভূত। ইঙ্গরেজ এখন কর্ম্মশীলতায় শ্রেষ্ঠ পদ অধিকার করিয়াছেন। হিন্দু এখন কর্ম্মহীনতায় ইঙ্গরেজের দোষরাশির অনুকরণ করিয়া, পূর্ব্বতন গৌরব বিস্মৃত হইয়াছেন।

  1. তৃতীয় খণ্ড বান্ধবের ব্রিটিশইণ্ডিয়া শীর্ষক প্রবন্ধ।