পাতা:আমাদের জাতীয়ভাব - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[ ১৯ ]

সিরাজউদ্দৌলা এখন ইতিহাসে দুর্ব্বৃত্ত ও নৃশংস বলিয়া ধিক্কৃত হইতেছেন। অপরিপক্কমতি, অষ্টাদশবর্ষীয় যুবকের চরিত্র এখন অনন্ত কলঙ্ককালিমায় আচ্ছন্ন হইতেছে। কিন্তু এই যুবকের রাজত্বে বাঙ্গালীর যেরূপ ক্ষমতা, যেরূপ সাহস ও যেরূপ প্রাধান্য ছিল, সুসভ্য ব্রিটিশ রাজত্বে তাহার কিছুই পরিদৃষ্ট হইতেছে না। ইঙ্গরেজ এখন যৌবনবিবাহের পক্ষপাতী। কিন্তু প্রাচীন সময়ে তাঁহাদের দেশেই অল্পবয়সে বিবাহের প্রথা প্রচলিত ছিল। পূর্ব্বে ইঙ্গলণ্ডে, সাধারণতঃ দ্বাদশবর্ষে বালিকাদের বিবাহ হইত। যখন সপ্তম হেন্‌রির জন্ম হয়, তখন তাহার মাতা লেডী মারগারেটের বয়স চৌদ্দ বৎসরেরও কম ছিল। ভারতের প্রথম গবর্ণর জেনেরল ওয়ারেণ হেষ্টিংসের পিতা পঞ্চদশবর্ষে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয়েন। এইরূপ আরও অনেক দৃষ্টান্ত সংগৃহীত হইতে পারে। বাল্যবিবাহে সে সময়ে ইঙ্গরেজের বলবীর্য্যের হানি হয় নাই। ইতিহাস সে সময়ের ইঙ্গলণ্ডকে কাপুরুষের আবাসভূমি বলিয়াও পরিচিত করে নাই।

 এইরূপে, ইঙ্গরেজের দেখাদেখি, আমরা আমাদের জাতীয় রীতি নীতির সকল অংশেই দোষ দেখিতেছি। ইঙ্গরেজের সবই ভাল, আর আমাদের সবই মন্দ, এইরূপ ধারণাই আমাদের জাতীয় ভাবের অধোগতির মূল হইয়াছে। আমরা যদি ইঙ্গরেজের একতা, উদ্যম, উৎসাহ প্রভৃতি গুণের অনুকরণ করিতাম, তাহা হইলে আমাদের এরূপ দুর্দ্দশা ঘটিত না। কিন্তু আমরা অতি হীন অনুকরণে প্রবৃত্ত হইতেছি। আমাদের নিকট ইঙ্গরেজের বাহ্য ভঙ্গীরই আদর হইতেছে। আমাদের তুলা ও পাট ইঙ্গলণ্ডে যাইতেছে, সেস্থানে কাপড় প্রস্তুত হইয়া আমাদের লজ্জা নিবারণ ও শীতাতপ হইতে দেহরক্ষা করিতেছ। তাঁতী তাঁত ছাড়িয়া ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করিয়াছে। কর্ম্মকার জাতীয় ব্যবসায় পরিত্যাগ করিয়া উদরান্নের