পাতা:আমাদের জাতীয়ভাব - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[ ২০ ]

জন্য হাহাকার করিতেছে। যাঁহারা পৃথিবীবিখ্যাত ঢাকাই মস্‌লিন প্রস্তুত করিতেন, এখন তাঁহাদের সঞ্চিত অর্থেই তদীয় সন্তানগণের দিনপাত হইতেছে। আমরা কাঞ্চন ফেলিয়া কাচের আদর করিতেছি, স্বদেশের খাঁটি জিনিসের পরিবর্ত্তে আমাদের নিকট বিদেশের আপাতসৌন্দর্য্যময় দ্রব্যেরই সম্মান হইতেছে। সম্রাট আরঙ্গজেবের সময়ে, একজন ফরাসী ভ্রমণকারী, অনেকদিন এতদ্দেশে বাস করিয়াছিলেন। তিনি স্বীয় ভ্রমণবৃত্তান্তে লিখিয়া গিয়াছেনঃ—“বাঙ্গালার অনেক স্থান মিশরদেশ অপেক্ষাও উর্বর। এই দেশে অপর্য্যাপ্ত ধান্য, তুলা, নীল ও রেসম প্রভৃতি উৎপন্ন হয়। ভারতবর্ষের অনেক স্থানই বহু লোকাকীর্ণ। শিল্পিগণ শাল, গালিচা, রেসম ও সূতার কাপড় প্রভৃতি প্রস্তুত করে। এই সকল বাণিজ্য দ্রব্যের বিনিময়ে পৃথিবীর অনেকস্থান হইতে স্বর্ণ ও রৌপ্য আসিয়া ভারতবর্ষে জমা হয়। ভারতবর্ষীয়েরা অপরদেশোৎপন্ন দ্রব্য অধিক পরিমাণে ব্যবহার করে না। সুতরাং, এই স্বর্ণ ও রৌপ্য প্রায় সমস্তই, অন্যত্র না গিয়া, ভারতবর্ষে থাকিয়া যায়। এজন্য, অতি সামান্য অবস্থার লোকেও স্ত্রী কন্যাদিগকে স্বর্ণ ও রৌপ্যের অলঙ্কার দিয়া থাকে। * * * বঙ্গদেশ শস্যসম্পত্তিপূর্ণ। যে স্থানে যাওয়া যায়, সেই স্থানেই ইহার শ্যামল শোভা দেখিয়া নেত্র পরিতৃপ্ত হয়। এই দেশে এত ধান্য জন্মে যে, তদ্দ্বারা সমস্ত বাঙ্গালার ও অন্যান্য অনেক দেশের লোকের ভরণপোষণনির্ব্বাহ হয়। বাঙ্গালার চিনি, তুলা, রেসম প্রভৃতি ভিন্ন ভিন্ন দেশে গিয়া থাকে। * * রাজমহল হইতে সমুদ্র পর্য্যন্ত, গঙ্গার দুই দিকে বহুসংখ্যক খাল দেখা যায়। বাণিজ্যের সুবিধার জন্য, ঐ সকল খাল কাটা হইয়াছে। খালের উভয়পার্শ্বে লোকাকীর্ণ নগর, পল্লী ও শস্যপূর্ণ ক্ষেত্র আছে। যতবার দেখা যায়, ততবারই ঐ সকল দৃশ্য নয়নের অনির্ব্বচনীয় প্রীতিসম্পাদন করে।” কিন্তু