পাতা:আমাদের জাতীয়ভাব - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[ ২১ ]

এখন আর এই সুন্দর দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হয় না। ইহা এখন ইতিহাসের কথামাত্রে পর্য্যবসিত হইয়াছে। সম্পত্তিসম্পন্না, শস্যশ্রামলা ভূমি, আজ ব্রিটিশবাণিজ্যদ্রব্যে পরিপূর্ণ। লোকবিশ্রুত পবিত্র সমাজ আজ ব্রিটিশ রীতিনীতি, ব্রিটিশ আচারব্যবহারের বিহারক্ষেত্র। পূর্ব্ব সমৃদ্ধি ও পূর্ব্ব গৌরবে মহিমান্বিত জনগণ, আজ ব্রিটিশ সিংহের দ্বারে ভিক্ষাপ্রার্থী। প্রলয়পয়োধির জলোচ্ছ্বাসে সে গৌরব, সে মহত্ত্বের চিহ্ন বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে। যে এক সময়ে অপরের অভাবমোচন করিত, সে আজ আপনার অভাবে আপনিই দিশাহার হইয়া শিরে করাঘাত করিতেছে।

 ইহা অপেক্ষা শোচনীয় অধঃপতন আর সম্ভবে না। ইহা অপেক্ষা মর্ম্মস্পর্শী দৃশ্য আর নেত্রপথবর্ত্তী হয় না। আমরা যতদিন স্বদেশীয় দ্রব্যের আদর করিতে না শিখিব, ততদিন আমাদের মধ্যে জাতীয় ভাবের বিকাশ হইবে না। পাশ্চাত্য বিজ্ঞানের সহিত প্রতিযোগিতা করিতে না পারিয়া, আমাদের শিল্পিগণ দিন দিন হীনাবস্থাপন্ন হইতেছে বটে, কিন্তু প্রধানতঃ আমাদের দোষেই আমাদের দেশের শিল্পদ্রব্যের অবনতি ঘটিতেছে। আমরা সামান্য খেলনাটি,—সামান্য দেশলাইটি পর্য্যন্ত বিলাত হইতে গ্রহণ করিতেছি। যতদূর সম্ভব, আমরা যদি ততদূর স্বদেশীয় দ্রব্যের ব্যবহারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হই, তাহা হইলে দিন দিনই আমাদের শিল্পদ্রব্যের উন্নতি হইতে থাকে। আমাদের দেশে উৎকৃষ্ট কাপড় প্রস্তুত হইতেছে,—কাঞ্চননগরে উৎকৃষ্ট ছুরি কাঁচি ও নাটাগড়ে উৎকৃষ্ট কলকব্জার কারখানা হইয়াছে, লিখিবার উৎকৃষ্ট কালী পাওয়া যাইতেছে; যৌথকারবারে কলকারখানা, রেলওয়ে প্রভৃতির সূত্রপাত হইতেছে, এ সময়ে আমাদের নিশ্চিন্ত থাকা উচিত নহে; ভিন্নদেশের মুখাপেক্ষী হইয়া, জাতীয় ভাবে জলাঞ্জলি দেওয়াও কর্ত্তব্য নহে। আমরা এতদিন ইঙ্গরেজের