পাতা:আমাদের জাতীয়ভাব - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[ ২৬ ]

পারি, হিন্দুকে সেরূপ পারি না। হিন্দু, তাঁহার কাব্যের গভীর ও উদার ভাব লইয়া, আমাদের সহিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে পারেন। এমন কি, তাঁহার নিকট অভিনব বলিয়া স্বীকৃত হইতে পারে, এরূপ বিষয় আমাদের বিজ্ঞানেও অল্প আছে।” এই প্রশস্তহৃদয়, সূক্ষ্মদর্শী লেখকের লেখনী হইতে এইরূপ বাক্য নির্গত হইয়াছে। আমরা এইরূপ মহামহিমাময় হিন্দুবংশ হইতে উৎপন্ন হইয়াছি। আমাদের নিরাশ হওয়া উচিত নহে। উৎসাহ ও উদ্যমে বলসম্পন্ন এবং প্রকৃতজ্ঞানে মহিমান্বিত হইয়া, সন্তানোচিত কার্য্য করা আমাদের কর্ত্তব্য। যে সিন্ধু ও সরস্বতীর মনোহর পুলিনে, যোগাসনে উপবিষ্ট হইয়া, প্রাচীন হিন্দুগণ পরম শক্তির ধ্যান করিতেন, সে সিন্ধু সরস্বতী আজও বর্ত্তমান রহিয়াছে। যে শান্তরসাম্পদ স্থানে, মনস্বী আর্য্যপুরুষগণ অমৃতময়ী সারস্বতী শক্তির উপাসনা করিতে করিতে সভ্যতার স্নিগ্ধজ্যোতির বিকাশ করিতেন, সে সকল স্থান আজও দর্শকের নেত্রপথবর্ত্তী হইতেছে। যে সকল নগর শিল্প বাণিজ্যে শ্রীসম্পন্ন হইয়া, সর্ব্বত্র সমৃদ্ধিগৌরবের পরিচয় দিত, তৎসমুদয় আজও মানচিত্রে শোভা পাইতেছে। আশা আছে, হিন্দু, অতীত গৌরবের সাক্ষীভূত এই সকল চিহ্ন দর্শনে আত্মবলে বলীয়ান হইবে, এবং অপূর্ব্ব জাতীয় ভাব ও ধর্ম্মোৎপাদ্য সভ্যতার গুণে, পুনর্ব্বার পৃথিবীতে প্রসিদ্ধি লাভ করিবে। যদি শত সহস্র বিঘ্ন বিপত্তি উপস্থিত হয়, কর্ত্তব্য পথ যদি দুষ্প্রবেশ, দুর্গম ও দুর্গতিজনক হইয়া উঠে, তাহা হইলেও, এই পুণ্যপুঞ্জময় পবিত্র ভূমিতে, সভ্যতা ও জ্ঞানের আদিম আশ্রয়ক্ষেত্র এই লোকপূজিত ভূখণ্ডে, পুনর্ব্বার হিন্দুর জাতীয় ভাবের অমৃতময় ফলের বিকাশ দেখা যাইবে, এবং পুনর্ব্বার হিন্দুর অনন্ত ও অক্ষয় কীর্ত্তি, ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে অঙ্কিত থাকিবে।

সমাপ্ত।