পাতা:আমাদের জাতীয়ভাব - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



আমাদের জাতীয় ভাব

প্রত্যেক জাতির ভাষায়, পরিচ্ছদে, রীতি নীতিতে তাহদের জাতীয় ধর্ম্মের পরিজ্ঞান হইয়া থাকে। পারসীক যে ভাবের পরিচ্ছদ পরিধান করেন, মহারাষ্ট্রীয় সে ভাবের পরিচ্ছদ ব্যবহার করেন না, হিন্দুস্থানী আবার তাঁহাদের জাতীয়ভাবসূচক অন্যরূপ পরিচ্ছদধারণ করিয়া থাকেন। ইঁহাদের ভাষা, রীতি নীতি প্রভৃতিও পরস্পর পৃথক প্রকৃতির। এক জাতির ভাষা অপর জাতি ব্যবহার করিলে বা একজাতি অপর জাতির পরিচ্ছদ ও রীতি নীতির অনুকরণে প্রবৃত্ত হইলে, তাঁহার জাতিগত বিশেষত্ব থাকে না। সুতরাং সে জাতি তাহার জাতীয় ভাব হইতে পরিভ্রষ্ট হয়। এইরূপে স্বদেশীয় দ্রব্যে উপেক্ষা করিয়া, যে নিরন্তর বিদেশীয় দ্রব্যের ব্যবহারে প্রবৃত্ত হয়, তাহারও জাতীয়ভাবের মর্য্যাদা থাকে না। ভিন্ন জাতির আক্রমণে ও ভিন্ন জাতির আধিপত্যবিস্তারে, অনেক সময়ে আক্রান্ত ও বিজিত জনপদের অধিবাসীদিগের জাতীয় ভাবের বৈলক্ষণ্য হইয়া থাকে। বিজিত জনগণ অনেক বিষয়ে বিজেতারই অনুকরণে প্রবৃত্ত হয়। রোমকদিগের আক্রমণে ইঙ্গলণ্ডের প্রাচীন অধিবাসীদিগের এইরূপ রূপান্তর ঘটিয়াছিল। গ্রীকদিগের আক্রমণে অনেক প্রাচ্য জনপদও গ্রীশের রীতি নীতিপরিগ্রহ করিয়াছিল। ভারতবর্ষ বহুবার বহু বিদেশীয়কর্ত্তৃক আক্রান্ত হইয়াছে। এই সকল আক্রমণে হিন্দু কি পরিমাণে জাতীয় গৌরবরক্ষা করিয়াছে, ভারতবর্ষ কি পরিমাণে বিদেশীয় দ্রব্যের মুখাপেক্ষী হইয়াছে, সংক্ষেপে তাহার আলোচনায় প্রবৃত্ত হইতেছি।