পাতা:আমাদের জাতীয়ভাব - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

  

ছিল। তখন আমাদের শিল্পদ্রব্য বা আমাদের সভ্যতার বলক্ষয় হয় নাই। এখন ইঙ্গলণ্ডের সাহিত্যচর্চ্চার জন্য অক্ষ্ফোর্ডের যেরূপ সমাদর, সমগ্র ভারতে তখন নবদ্বীপের তদপেক্ষা অধিক সমাদর ছিল। আর্য্যাবর্ত্ত হইতে দক্ষিণাপথ পর্য্যন্ত সমস্ত স্থানের ছাত্রেরা সংস্কৃত শিখিতে নবদ্বীপে আসিত, মুসলমানের রাজত্বে আমাদের শিল্পিগণ যে সমস্ত শিল্পদ্রব্য প্রস্তুত করিত, অপক্ষপাত ঐতিহাসিক আজ পর্য্যন্ত তাহার প্রশংসা করিয়া থাকেন।

 পাঠান রাজত্বের পর মোগল রাজত্বের সূত্রপাত হয়। ক্রমে মোগল সম্রাটের বিজয়পতাকা কাবুল হইতে গোলকুণ্ডা পর্য্যন্ত উড্ডীন হইতে থাকে। এ সময়েও আমাদিগকে পরমুখপ্রেক্ষী হইতে হয় নাই। এ সময়ে আমাদের শিল্পিগণ যে সকল দ্রব্য প্রস্তুত করিত, আমরা তৎসমুদায়েরই ব্যবহার করিতাম। বিদেশেও ঐ সকল দ্রব্য আদরসহকারে পরিগৃহীত হইত। আমাদের ভাষাতেও, এ সময়ে, সর্ব্বাংশে জাতীয়ভাব প্রতিফলিত হইত। কবিকঙ্কণ মুকুন্দরামের চণ্ডী, ঘনরামের শ্রীধর্ম্মমঙ্গল, ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল, কবিরঞ্জন রামপ্রসাদের সঙ্গীতাবলী, এ সময়ে বাঙ্গালা সাহিত্য উজ্জ্বল করে। ভারতের মস্লিন প্রভৃতি, এ সময়েও, ইঙ্গলণ্ড ও ফ্রান্সের ভূপতিদিগকেও বিস্মিত করিয়া তুলে। ভারতীয় বিচিত্র কারুকার্য্য ও প্রাসাদাবলির অপূর্ব্ব সৌন্দর্য্য, এ সময়েও, ইউরোপীয় ভ্রমণকারীদিগের হৃদয় আকৃষ্ট করে। এ সময়ে ভারতের বীরপুরুষগণ যেরূপে বীরত্বকীর্ত্তির সম্মান রক্ষা করিতেন, শিল্পিগণ যেরূপ নৈপুণ্যসহকারে শিল্পকার্য্যে ব্যাপৃত থাকিতেন, কবিগণ যেরূপ মধুরভাবে জাতীয় ভাবের পরিচয় দিতেন, অদ্যাপি ঐতিহাসিকগণ, আহ্লাদ ও প্রীতির সহিত তাহার বর্ণনা করিয়া থাকেন। রাজা মানসিংহ মোগলের সহিত বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপিত করিলেও স্বজাতিসমাজে সম্মানরক্ষায়