পাতা:আমার জীবন.djvu/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

છર আমার জীবন এমন কি, যদি একখানি লেখা কাগজ দেখিতাম, তাহাও লোকের সম্মুখে তাকাইয়া দেখিতাম না। পাছে কেহ বলে যে, লেখাপড় শিখিবার জন্তই দেখিতেছি । কিন্তু আমি মনের সহিত সর্বদ পরমেশ্বরের নিকট এই বলিয়া প্রার্থনা করিতাম, হে পরমেশ্বর ! তুমি আমাকে লেখাপড়া শিখাও, আমি লেখাপড়া শিখিয়া পুথি পড়িব । হে দীননাথ । তখন যে তোমাকে আমি ডাকিতাম, সে এই উপলক্ষে মাত্র । আর মনে মনে বলিতাম, পরমেশ্বর ! তুমি আমাকে কোথা হইতে কোথা আনিয়াছ । আমার জন্মভূমি পোতাজিয়া গ্রাম, আর এই তিন দিবসের পথ রামদিয়া । তুমি আমার আত্মীয় বন্ধু সকল ত্যাগ কয়াইয়া এত দূরে আনিয়াছ। এখন এই রামদিয়া গ্রামই আমার বাস্তুভূমি, কি আশ্চর্য! আমি যখন কোন কাজ করিতে জানিতাম না, তখন এক-আধখানি কাজ যদি করিতাম, আমার মা সেই কাজ দেখিয়াই কত সস্তোষ প্রকাশ করিতেন । সেই কাজের কথা বলিয়া বলিয়া কত আহলাদ করিতেন। এখন আমি পরাধীন হইয়া এত কাজ শিখিয়াছি যে, আমি এত লোকের কাজ করিতে পারি। এখন এই সকল লোক আমার অন্তরঙ্গ হইয়াছে, আমি মনে মনে এই সকল কথা বলিয়া কাদিতাম । সে কান্না অন্ত কেহ জানিত না ! আমি ঘোমটার ভিতরে র্কাদিতাম, তাহ আর ঙ্গোনিবে । দীননাথ কেবল তুমি জানিয়াছ । হে পিতা পরমেশ্বর ! হে মনের মন! হে জীবনের জীবন ! হে দয়ার সাগর দয়ানিধি ! তোমার দয়ার স্রোতে অহোরাত্র ভাসিতেছি । তুমি আমার বিপদ সম্পদে সকল সময়েই সঙ্গে সঙ্গে আছ, আমার মনে যখন যে ভাব হইয়াছে, তাহা সকলি তুমি জান, তোমার অগোচর কিছুই নাই । আমি বার বৎসরের সময় পিত্রালয় ত্যাগ করিয়া রামদিয়া গ্রামে আসিয়াছি। আর এই পর্যন্ত সেই রামদিয়াতেই আছি ! কিন্তু বাটীর সমুদয় লোক বড় সজ্জন ছিলেন, আমাকে ভারি স্নেহ করিতেন, এমন কি, যদি আমার কোন প্রকার যন্ত্রণা উপস্থিত হইত, তাহাদের মেহগুণে যে যন্ত্রণ আমার যন্ত্রণাই বোধ হইত না ।