পাতা:আমার বাল্যকথা ও আমার বোম্বাই প্রবাস.pdf/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার বোম্বাই প্রবাস ఫిలి মায়। কোন মারাঠী কিম্বা গুজরাট বন্ধুর বাড়ী নিমন্ত্রণে গেলে কখন কোন জিনিস খেতে হবে—কোথা হতে আরম্ভ কোথায় গিয়ে শেষ, এ এক সমস্ত । খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে তরকারী আর নানা রকম চাটনী, অম্বলের জায়গায় পঞ্চামৃত”, ( এক রকম পাচ মেশালো অম্ল-মধুর ঝোল ), আর ‘কড়ি এক রকম মসলামাখ টক দধির পাক । মিষ্টান্নের মধ্যে ‘শ্রীথগু’ মারাঠীদের পরম উপাদেয় সামগ্রী, জাফরাণযুক্ত মিঃ দধি দিয়ে প্রস্তুত। মিষ্টান্নের ব্যাপার আর সব আমাদেরই মতন, কেবল ওদেশে ছানার চলন নেই, সুতরাং ওরা সন্দেশ রসগোল্লা প্রভৃতি ভাল ভাল মিষ্টান্ন হতে বঞ্চিত । কোন বাঙ্গালী ময়রা ও-অঞ্চলে মিষ্টান্নের দোকান খুল্লে বোধ করি বিলক্ষণ এক হাত লাভ করতে পারে। আহারের সময় মারাঠী গৃহস্থ রেশমের পট্টবস্ত্র ( সোল ) পরিধান করেন। আহারান্তে ইংরাজী ভোজের After-dinner Speech-এর ধরণে কিছু বলা একটা মারাঠী রীতি আছে, সেটা আমার খুব ভাল লাগত। বক্তৃত৷ ন হোক কোন ংস্কৃত বা মারাঠী শ্লোক কিম্ব গীতের একচরণ – এইরূপ যার যা ইচ্ছা আবৃত্তি করেন, তাতে উপস্থিত নিমন্ত্রিতমণ্ডলীর বেশ আমোদ হয় । ডাক্তা েলৈ যে, আহারের সময় হাসিখুসি মিষ্টীলাপে পরিপাকের সাহায্য হয় ; অতএব উক্ত নিয়- স্থশাস্ত্রসন্মত বলতে হবে। বিবাহ ও ভোজন-বিচার হিন্দুয়ানীর এই দুই দুর্গপাল। বাঙ্গল দেশে ভোজন-বিচারের নিয়ম অনেকটা শিথিল হয়ে এসেছে মনে হয়—অন্ততঃ কলকাতায় । আমরা সছরে মানুষ কলকাতার কথাই বলতে পারি। কিন্তু বোম্বায়ে দেখতে পাই এই আন্তজাতিক ভোজনের সবে মাত্র স্বত্রপাত হয়েছে । “আর্য্য-সঙ্ঘ” (Aryan Brotherhood) নামে ও-দেশে মাননীয় জষ্টিস চন্দবারকরের নেতৃত্বে একটি সঙ্ঘ স্থাপিত হয়েছে। র্তার জাতভাঙ্গ পণে কার্য্যারম্ভ করেছেন। তাদের উদ্যোগে সম্প্রতি ঐরুপ একটা মিশ্রভোজ দেওয়া হয়—“প্রীতি-ভোজন”। কিন্তু এই প্রীতি-ভোজন তাদের জাত-ভাইদের অপ্রীতিকর হয়ে উঠেছে। তার সভাসমিতি ডেকে তিলকে তাল করতে উদ্যত হয়েছে । মজা এই যে, দুজন মাহার জাতীয় ভদ্রলোক এই ভোজনে যোগ দিয়েছিল, শুনছি নাকি তাদের নিজের জাত থেকে বহিষ্কৃত করবার হুকুম জারী হয়েছে, অথচ মাহার জাত অস্ত্যজ বলে হিন্দু সমাজের অস্পৃশু। যা হোক মারাঠীদের মধ্যে এই জাতিভেদের বাধা অতিক্রম করবার এক সহজ উপায় আছে। আমি দেখেছি যে, বিভিন্ন জাতের মিশ্রভোজনে তাদের কোন আপত্তি নেই, কেবল স্বতন্ত্র পংক্তিতে আসন দেওয়া চাই । এই নিয়মে কোন মুসলমানও হিন্দুভোজে যোগ দিতে পারেন, খালি পংক্তিভেদের ব্যবস্থা করলেই হল । এই নিয়ম আমাদের orthodox হিন্দু সমাজে প্রচলিত হলে মন্দ হয় না। এই সামান্ত রাস্তাটুকু খুলে গেলেও যথালাভ মনে করা যায়। २६