পাতা:আমার বাল্যকথা ও আমার বোম্বাই প্রবাস.pdf/২৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

३ ॐ 8 আমার বোম্বাই প্রবাস পর্য্যন্ত র্তাহার পলায়ন কেহ সন্দেহ করিতে পারে নাই। তাহার জন্ত একস্থানে অশ্ব প্রস্তুত ছিল তাহাতে চড়িয়া পুত্রকে সঙ্গে বসাইয়া লইয়া সেই যে একটানা চলিলেন আর কেহই তাহাকে ধরিতে পারিল না। মথুরায় আসিয়া মস্তক মুগুন ও ভস্মলেপনপুর্ব্বক সন্ন্যাসীর বেশ ধারণ করিলেন। পুত্রকে সেখানেই রাখিয়া গেলেন, বেচার এমন শ্রাস্ত ক্লান্ত হইয় পড়ি ছিল যে তার আর নড়িবার শক্তি ছিল না। তথা হইতে আলাহাবাদ, আলাহাবাদ হইতে কাশী, কাশী হইতে গয়াতীর্থ, গয়া হইতে কটক, কটক হইতে হাইদ্রাবাদ, এইরূপে ৮ মাসের মধ্যে স্বদেশে ফিরিয়া আসিলেন। ফিরিয়া আসিয়া রাজগড়ের কেল্লায় তাহার মাত জীজাবার সহিত সাক্ষাৎ করিতে যান । একদিন হঠাৎ দুইজন বৈরাগী জীজাবার দ্বারে আসিয়া উপস্থিত। জীজাবা তাহীদের ডাকিয়া পাঠাইলে একজন দস্তুর মত র্তাহাকে আশীর্ব্বাদ করিলেন, অন্তজন পাগড়ী খুলিয়া তাহার চরণে প্রণত হইলেন। মাথায় চিহ্ন দর্শনে আপনার পুত্রকে চিনিতে পারিয়া জীজাব র্তাহাকে স্নেহভরে আলিঙ্গন করিলেন। অনেকদিন পরে পুত্রকে পাইয়৷ জীজাবার আর আনন্দের সীমা রহিল না। সেদিন কাঙ্গালীদিগকে অন্নদান, তোপধ্বনি এবং বাদ্যোস্তমের ধুম পড়িয়া গেল, নরনারী ছোট বড় সকলেই আনন্দোৎসবে মগ্ন झ्हेल । এই প্রকারে অশেষ বিস্ত্র বিপত্তি অতিক্রম করিয়া শিবাজী আল্পে অল্পে তাহার রাজ্য বিস্তাৱ করিতে লাগিলেন, নর্ম্মদ হইতে কৃষ্ণ নদী পর্য্যন্ত দক্ষিণ ভারতবর্ষ তাহার অধীন হইল। "চোথ’ ও ‘সরদেশমুখী’ এই দ্বিবিধ কর আদায় করিবার পরওয়ান প্রথম দক্ষিণাত্যের রাজাদের নিকট হইতে পাইয়াছিলেন, পরে রীতিমত বাদসাহী পরওয়ান লাভ করিলেন। ৬ই জুন ১৬৭৪ খৃষ্টাব্দে তিনি রাজা পদবী গ্রহণ করিয়া রাজগড়ে মহ ধুমধাম করিয়া রাজ্যাভিষিক্ত হইলেন। এই উপলক্ষ্যে আপনাকে স্বর্ণস্তুপে ওজন করিয়া স্বীয় দেহভার পরিমাণ স্বর্ণরাশি ব্রাহ্মণদের মধ্যে বিতরণকরতঃ অতুল খ্যাতি প্রতিপত্তি লাভ করিলেন। ৫ই এপ্রেল ১৬৮৭ খৃষ্টাব্দে ৫৩ বৎসর বয়সে রায়গড়ে তাহার মৃত্যু হয় । শিবাজীর মৃত্যুকালে তাহার রাজ্যাধিকার সামান্ত ছিল না । গুণ্ডাবী হইতে পাণ্ড পর্য্যন্ত ( ইংরাজ ও পোর্তুগীসদের কোন কোন স্থান বাদে) কোঙ্কণের সুবিস্তীর্ণ প্রদেশ ; ওদিকে আবার পুণা হইতে জুনের পর্য্যন্ত সুবিস্তৃত মারাঠা প্রদেশ–কত গিরি দুর্গ সমেত র্তাহার অধিকারভুক্ত ; কারওয়ার অঙ্কোলা প্রভৃতি কতকগুলি সমুদ্র তীরবর্তী স্থানে তাহার থান ; তাহ ছাড়া দ্রাবিড়, তাঞ্জোর, কর্ণাটক, খানদেশ ও অস্তান্ত স্থানে তাহার বিজিত ভূখণ্ড সকল প্রক্ষিপ্ত। দস্থ্যবৃত্তি হইতে শিবাজীর জীবনের আৱন্ত-অসীম রাজ্যের অধীশ্বর হইয়া তিনি জীবনযাত্রা শেষ করেন।