পাতা:আমার বাল্যকথা ও আমার বোম্বাই প্রবাস.pdf/৩৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার বোম্বাই প্রবাস રi> মাল ব্যবহারে আদিত ও তাহার রচিত ব্রহ্ম-সঙ্গীত গীত হইত, আর আমাদের বাঙ্গল সঙ্গীত অনুবাদ করিয়া গাওয়া হইত। আমার মনে পড়ে, রবীন্দ্রনাথ এক সময় আমার ওখানে গিয়া দিন কতক ছিলেন। সমাজে আমরা দুই ভায়ে মিলিয়া সমস্বরে গান করিতাম। ১৮৮৬ সালে ভোলানাথ ভাই ইহলোক পরিত্যাগ করিয়া চলিয়া গেলেন, যেন নগরের একটি উজ্জল দীপ নির্ব্বাণ হইল। তাহার পুণ্যস্মৃতি আহমদাবাদ হইতে শীঘ্র বিলুপ্ত হইবার নহে। তাহার মৃত্যুর পর মহীপত রাম সমাজের সম্পাদকরূপে কার্য্য করেন। মহীপত রাম পরলোকগত হইলে তাহার সুযোগ্য পুত্র রমণভাই ও পুত্রবধু সমাজের কার্য্য ভার গ্রহণ করিয়াছেন । এই প্রসঙ্গে আর একটি মহাত্মার নাম উল্লেখযোগ্য —লালশঙ্কৰ উমিয়াশঙ্কর । ভোলানাথ ভায়ের পর ইনি আহমদাবাদ প্রার্থনা-সমাজের নেতৃদলের মধ্যে গণ্য। সম্প্রতি তিনি আত্মীয়স্বজন বন্ধুবৰ্গকে শোকসাগরে ভাসাইয়া পরলোকগত হইয়াছেন । লালশঙ্কর একজন স্বদেশের পরম হিতৈষী সাধুপুরুষ ছিলেন । দেশহিতকর এমন কোন সৎকার্য্য ছিল না যাহার অনুষ্ঠানে তিনি উৎসাহের সহিত যোগ না দিতেন । তিনিই পগুরপুর অন্যথাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা, ব্রাহ্ম-সমাজের অগ্রণী, সুরাপান নিবারণী সভার প্রধান উদ্যোগী, সর্ব্বপ্রকার সামাজিক উন্নতি সাধনে তিনি সতত যত্নবান ছিলেন । ধর্ম্মবিষয়ে মতভেদবশতঃ যদিও হিন্দুসমাজ তাহাকে স্বীয় গণ্ডীর ভিতর স্থান দিতে সঙ্কুচিত হইত তথাপি তিনি সকলকেই তাহার ভ্রাতৃ আলিঙ্গন দিতে প্রস্তুত ছিলেন। তাহার কর্ম্মক্ষেত্র জাতিনির্বিশেষে এত প্রসারিত ছিল যে তিনি আপামর সকল লোককেই আপনার জালে আকর্ষণ করিতেন, কাহাকেও আপনা হইতে দূরে রাখতেন না। র্তাহার ধর্ম্মনিষ্ঠ সরল সাধু-চরিত্রগুণে সকলেরই চিত্ত তাহার প্রতি আকৃষ্ট হইত। তাহার কোন শত্রু ছিল না, সকলকেই তিনি মিত্ররূপে বরণ করিতেন। র্তাহার অকাল মৃত্যুতে প্রার্থনা-সমাজ, এমন কি গুজরাটের সমগ্র হিন্দুসমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে। গুজরাটে যে ব্রহ্মোপাসনার বীজ প্রক্ষিপ্ত হইয়াছে তাহ অল্পে অল্পে অঙ্কুরিত হইতেছে ; কালক্রমে ফলবান বৃক্ষরূপে সমুখিত হইবে, এরূপ আশা করা চুরাশা নহে। সাতার, যেখানে আমার সর্ব্বিসের শেষ ভাগ অতিবাহিত হয়, সেখানেও একটি প্রার্থনা-সমাজ ছিল। সেখানকার কতিপয় উৎসাহী ব্রাহ্ম মিলিয়া সমাজের কার্য্য নির্ব্বাহ করিতেন ও তাহার সাম্বৎসরিক উৎসবে বোম্বাই পুণা প্রভৃতি স্থান হইতে বাহিরের লোকেরও সমাগম হইত। তাহদের মধ্যে একটি সুগায়ক ইহুদী-ব্রাহ্মকে আমার বেশ মনে পড়ে। চিন্তামণ নারায়ণ ভট, আমার একটি বন্ধু, এই সকল কার্য্যে সহায়ত করিতেন। সমাজ-সংস্কার-ব্রতী উন্নতিশীল যুবকবৃন্দের তিনি একজন অগ্রগণ্য ছিলেন।