পাতা:আমার বাল্যকথা ও আমার বোম্বাই প্রবাস.pdf/৩৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার বোম্বাই প্রবাস २७७ অপর্য্যাপ্ত পড়িয়া আছে । গাড়ী চলাচলের কোন বাধা নাই, আবহাওয়া শীতোষ্ণের মাঝামাঝি। সুন্দর লাল রাস্তা, বিপণি, বাঙ্গল, উষ্ঠান পাহাড়ের গায়ে ছড়াইয়া আছে । উপরে সমান জমি এত আছে যে ঘরে থাকিয়া পাহাড়ে বাস করিতেছি মনেই হয় না ! পাহাড়ের শোভা দেখিতে গেলে এক এক প্রান্তে গিয়া দেখিতে হয়—এক এক Point Cola Tiger point, Sidney point, Elphinstone point #esis of এক কোণ হইতে পার্ব্বত্যশোভা নব নব মূর্ত্তি ধারণ করে। কোনথানে গাছপালাশূন্ত কঠোর পর্বতশ্রেণী । কোন পাহাড় “বপ্রক্রীড়া পরিণত গজপ্রেক্ষণীয়।” কোন কোন পাহাড় দুস্তর বন জঙ্গলের মধ্য দিয়া পাতালে নামিয়া গিয়াছে। পশ্চিমে প্রতাপগড়ের পাহাড় বনরাজির মধ্য হইতে গগন ভেদ করিয়া উঠিয়াছে। এই পাহাড়ের উপর শিবাজী রাজা দুর্গ বাধিয়া বাস করিতেন। মহাবলেশ্বরের মত সুন্দর মুগম স্বাস্থ্যনিবাস এদেশে অল্পই পাওয়া যায়, কেবল বৃষ্টির আধিক্যবশতঃ বর্ষায় কয়েক মাস উহা বাসযোগ্য নহে । আমাকে অনেকে খোটা দিতেন, বিদেশে সমস্ত জীবনটা চাকরী করে কাটানো কি ঝকমারি,— তার চেয়ে স্বদেশে কেরানীর কাজ করাও ভাল।” কিন্তু বিদেশে চাকরী করিবার যেমন কতকগুলি অসুবিধা আছে, তেমনি সুবিধাও বিস্তর । আত্মীয় স্বজন হইতে সুপারিসের দরখাস্ত আসে না, সেই এক মহৎ লাভ। বিচ্ছেদের পর মিলনের আনন্দ সে কি কম ? স্বদেশ ও বিদেশের মধ্যে একটি বন্ধনস্বত্র স্থাপন করিবার অবসর পাওয়া সেও কি সমান্ত লাভ ? যতদিন আমি ওদেশে ছিলাম, মনে হষ্টত বোম্বাই বাঙ্গল যেন একটি যোগস্থত্রে গাথা রহিয়াছে। "বাঙ্গল দেশ হইতে আমার পরিবার আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবের মধ্য হইতে একটা লোকের স্রোত একটান বহিতেছিল, তাহাদের যাওয়া আসার বিরাম ছিল না । ইহাতে এই দুই দেশের লোকদের পরস্পর সখ্যবন্ধন হইবার দিব্য সুযোগ হইত। আমি ও-দেশে থাকিয় বোম্বাই বাসীদিগের যে সকল সদগুণ তাহা গ্রহণ করিতে পারিলাম—আর আমার য দিবার তা দিতেও সক্ষম হইলাম। আমি যেখানেই কর্ম্ম করিতাম, যাহাতে ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে সদ্ভাব সঞ্চার হয়, সে বিষয়ে যত্নের কোন ক্রটি করি নাই। আমার এইরূপ কর্ত্তব্য সাধনের যে পুরস্কার তাহাও যথেষ্ট পাইয়াছিলাম, আমার আত্মপ্রসাদ আর লোকের প্রসাদভাজন হওয়া এ দুইই আমার লাভ হইয়াছিল। কালক্রমে বোম্বাই আমার নিজের দেশ হইয়া গেল—সেখানকার অধিবাসীদের আতিথ্যসৎকারে তাহ আমাদের বিদেশ বলিয়া মনেই হইত না ।