পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দ্বারকানাথ ঠাকুর ও ম্যাক্সমুলার সম্বন্ধে কথোপকথন

 সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার সময় প্রোফেসার ম্যাক্সমুলার আমার সংস্কৃতের পরীক্ষক ছিলেন। পরীক্ষান্তে যখন আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম, তখন তিনি তাঁর নিজের সম্বন্ধে ও আমার স্বর্গীয় পিতামহ ও পিতৃদেব সম্বন্ধে আমাকে অনেক কথা বলেন।

 ভারতবর্ষের প্রতি তাঁর প্রেমাকর্ষণ সর্বপ্রথমে কিরূপে হয়, সে বিষয়ে তিনি বলেন যে অতি শৈশবকাল হইতে লোকমুখে ভারতবর্ষের নানা প্রকার বিবরণ শুনে তিনি সেটাকে একটা স্বপ্ন-রাজ্যের ন্যায় জ্ঞান করিতেন। রূপকথায় যেমন থাকে যে, যোদ্ধা একদিন হঠাৎ স্বপ্ন দেখিলেন যে, কোন অজানা দেশে এক পরমাসুন্দরী কন্যা বন্দিনীভাবে বাস করছে, তাই দেখে যোদ্ধার মন এমন বিচলিত হল যে, কত খোঁজ করে যুদ্ধ করে যতদিন না তার উদ্ধার সাধন করতে পারতেন, ততদিন যেমন নিশ্চিন্ত থাকতেন না; তেমনি ভারতবর্ষকেও তিনি তাঁর স্বপ্ন-রাজ্যের সুন্দরী বলে কল্পনা করতেন। তারপর যখন তাঁর দশ বৎসর বয়স তখন তাঁর স্কুলের কপিবুকের মলাটে হঠাৎ একদিন কাশীর স্নানের ঘাটের চিত্র দেখে স্বপ্নাবিষ্টের মত সেই দিকে চেয়ে বসে রইলেন। চিত্রটি যদিও বিশেষ পরিস্ফুট ছিল না, তবুও সে ছবিখানি তাঁর বেশ মনে ছিল। তিনি বল্লেন, “ভারতবর্ষ সম্বন্ধে বাস্তবিক তখন আমার কতটুকু জ্ঞান ছিল? কেবল এই শুনেছিলাম যে ভারতবাসীরা কৃষ্ণকায়, তারা বিধবাদের জ্বলন্ত চিতায় অপর্ণ করে, আর স্বর্গলাভ করবার জন্য জগন্নাথদেবের রথচক্রের তলে নিজেদের নিক্ষেপ করে শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করে। আমার কপিবুকের চিত্রে কিন্তু দেখলাম যে তারা বেশ লম্বা এবং সুশ্রী। আর গঙ্গাতীরে যে সকল মন্দিরাদি অঙ্কিত ছিল তাদের সৌষ্ঠব ও উচ্চ চূড়াগুলিতে এমন একটি মাহাত্ম্য প্রকাশ পাইতেছিল যে, আমার