পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
আ মা র বা ল্য ক থা

বীরসেনার যোগ্য আসন বটে। চান্দোর ত্যাগ করিয়া দিনের আলো থাকিতে থাকিতে তলঘাটের শোভা সন্দর্শন করিলাম। চারিদিকে পাহাড়শ্রেণী—কি চমৎকার দৃশ্য! এই পর্বতমালার উপর দিয়া যে রাস্তা গিয়াছে তাহার নির্মাণকৌশল কি আর বর্ণনা করিব—যে কারিগরের ইহা মনঃকল্পনা তাহার প্রতিভা স্মরণ করিয়া দিতেছে এবং স্পষ্টাক্ষরে প্রকৃতির উপরে বিজ্ঞানের জয় ঘোষণা করিতেছে। ঘাট হইতে নামিয়া উপত্যকা ভূমির দৃশ্যও অতি মনোহর —শ্যামল শস্যক্ষেত্রে যেন মখমল বিছাইয়া দিয়াছে। চতুষ্পার্শ্বস্থ কুঞ্জবন আবার বিহঙ্গদলের মধুর গানে প্রতিধ্বনিত—এ সকলি যারপর নাই মনোমুগ্ধকর। কিন্তু ভাই সে যাহাই হৌক, বাড়ীর দিকে আমার মন পড়িয়া রহিয়াছে—মনে হইতেছে আমার সেই কোণের ঘরটি পৃথিবীর সকল স্থানের মধ্যে সেরা।”

ইন্দোর, ২৮এ ডিসেম্বর

 ইন্দোর হইতে আমার পিতাকে যে পত্র লেখেন তাহাতে তলঘাটের শোভা সৌন্দর্য পুনর্বার উত্থাপন করিয়া লিখিতেছেন, “আমি Alps পর্বতে ভ্রমণ করিয়াছি, তাহার উপর দিয়া যে পথ কাটিয়া গিয়াছে তাহা প্রশংসাযোগ্য, তবুও এই গিরিপথের নিকট তাহাকে হার মানিতে হয়। এই সকল পথ দিয়া ভ্রমণ করা অতিশয় শ্রান্তিজনক। আমি বাল্যকাল হইতে ভ্রমণে অভ্যস্ত না হইলে এতটা কষ্ট সহ্য করিতে পারিতাম না।”

 তাঁর আর এক বন্ধুকে লিখিতেছেন—“আমি ইন্দোর সহর দেখিলাম। বিশেষ কিছু দ্রষ্টব্য নাই। রাস্তা ঘাট পাথরে বাঁধান, ভাল স্প্রিঙের গাড়ীর পক্ষে একেবারে অচল। ঘিঞ্জী সহর, বাজার যেমন আমাদের বড় বাজার, সরু সরু গলী, ময়লা ধুলিময়, ঠিক আমাদেরই পুণ্য নগরীর অনুরূপ। রাজপ্রাসাদে গিয়া সমস্ত দেখিলাম; ছোট ছোট ঘর, সঙ্কীর্ণ সিঁড়ি, ঠিক যেন একটি কয়েদখানা। দেখিবার মধ্যে সুবিখ্যাত অহল্যাবাইয়ের সমাধি