পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ছেলেবেলায় আমরা বাবামহাশয়ের কাছে বড় ঘেঁসতাম না। তিনি কখনও আমাদের ডেকে ইংরেজি বাঙলায় পরীক্ষা করতেন আর কখনও বা তাঁর মজলিসে গিয়ে আমরা চুপটি করে বসে থাকতুম। আমাদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ সম্বন্ধ ব্রাহ্মধর্ম শিক্ষার বেলায়। ব্রাহ্মধর্ম পড়াবার ভার তিনি নিজের হাতে নিয়েছিলেন। তা ছাড়া প্রত্যহ আমাদের পারিবারিক উপাসনা হত, তাতে আমরা সকলে যোগ দিতুম। আমি মুখে মুখে প্রার্থনা আবৃত্তি করতুম। একটি স্তােত্রমালার পুস্তকে কতকগুলি ভাল স্তবস্তোত্র সন্নিবিষ্ট ছিল, অক্ষয়কুমার দত্ত, রাজনারায়ণ বসু আরও অন্য কার কারও বিরচিত। তার প্রায় সকলগুলিই আমার কণ্ঠস্থ ছিল। ফরাসী ব্রহ্মবাদী Fenelon হতে অনুবাদিত যে প্রার্থনাটি মহর্ষির আত্মজীবনীতে দেওয়া হয়েছে সেটিও তার মধ্যে ছিল। অক্ষয়কুমার দত্তের একটি প্রার্থনা ছিল তা এখনাে কিছু কিছু স্মরণ আছে। তাঁর ভাষার বিশেষত্ব তা হতে স্পষ্ট ফুটে বেরচ্ছে। আরম্ভ এই—

 “হে ধ্রুবসত্য সনাতন! কালসহকারে কত বিষয়ের কত প্রকার পরিবর্তন হইতেছে, কিন্তু তােমার অপরিবর্তনীয় অপার কারুণ্যস্বরূপের কদাচ পরিবর্তন নাই। নদীর প্রবাহ পরিবর্তিত হইতেছে, নগর সকল পুরাতন হইতেছে, রাজ্য ও রাজা বিনষ্ট হইতেছে, মাস ও পক্ষ অতীত হইতেছে, শীত ও বসন্ত গমনাগমন করিতেছে, বাল্য যৌবন তড়িৎ সমান তিরােহিত হইতেছে, কাল ও মৃত্যু নিরন্তর ক্রীড়া করিয়া চরাচর শাসন করিতেছে কিন্তু তােমার সেই কারুণ্যস্বরূপের কোন পরিবর্তন নাই, ইত্যাদি।”