পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর (মেজদাদা)

 ও-বাড়ীর মেজদাদার সঙ্গে আমার খুব ভাব ছিল। তখন এ-বাড়ী ও-বাড়ীর কোন প্রভেদ ছিল না, আমরা তাঁকে আমাদের সহোদর ভাইয়ের মতন দেখতুম। তিনি ছিলেন মেজদাদা, আমি সেজদাদা বা সেজবাবু, আর বড়দাদা, এই তিনজনে সর্বদাই আমরা একত্রে থাকতুম, একসঙ্গে খেলা করতুম— আমরা এই trinity তিনে এক একে তিন। মেজদাদা আমাকে বড় ভালবাসতেন, আমিও তাঁর প্রতি অত্যন্ত অনুরক্ত ছিলুম। আমরা দুটিতে তেতালার ছাতে বসে গান করতুম, গল্প করতুম, কোজাগর পূর্ণিমায় হেসে খেলে বাগানে বেড়িয়ে রাত কাটাতুম। মেজদাদা গান বাজনা বড় ভালবাসতেন— তিনি নিজেও অনেক সঙ্গীত রচনা করেছেন— ব্রহ্মসঙ্গীত, জাতীয় সঙ্গীত, ইত্যাদি। “দীননাথ প্রেমসুধা দেহ হৃদে ঢালিয়ে” এ তাঁর গান। তিনি সব দিকে চৌকোষ ছিলেন—সামাজিকতা, লোকলৌকিকতা, বড়দাদার যে দিকটা অভাব ছিল, তিনি সেই সকল গুণে পূর্ণমাত্রায় ভূষিত ছিলেন।

 আমি বোম্বায়ে কার্যারম্ভ করবার কিছু পরে কলিকাতায় এক ‘স্বদেশী’ মেলা প্রবর্তিত হয়। বড়দাদা নবগোপাল মিত্রের সাহায্যে মেলার সূত্রপাত করেন, পরে মেজদাদা তাতে যোগদান করায় প্রকৃতপক্ষে তার শ্রীবৃদ্ধি সাধন হল। কলিকাতার প্রান্তবর্তী কোন একটি উদ্যানে বৎসরে বৎসরে তিন চারিদিন ধরে এই মেলা চলতো। সেখানে দেশী জিনিষের প্রদর্শনী, জাতীয় সঙ্গীত, বক্তৃতাদি বিবিধ উপায়ে লোকের দেশানুরাগ উদ্দীপ্ত করবার চেষ্টা করা হত। এই মেলা উপলক্ষে মেজদাদ। কতকগুলি জাতীয় সঙ্গীত রচনা করেন আর সেই মেলাই আমার ভারত সঙ্গীতের জন্মদাতা—