পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আ মা র বা ল্য ক থা
৬৯

আছে যা নিয়ে ইংরেজেরা বিদ্রূপ করে, তেমনি ‘বাবু’ সংস্কৃত উচ্চারণ শুনে না জানি তৈলঙ্গী বা মহারাষ্ট্রীয় পণ্ডিতেরা কি মনে করেন! সংস্কৃত কলেজের একজন ভূতপূর্ব অধ্যক্ষের সহিত আমার এই বিষয়ে কথা হয়। আমি বিনীতভাবে নিবেদন করেছিলুম যে, কালেজের বিদ্যার্থীদের বিশুদ্ধ সংস্কৃত উচ্চারণ শেখাবার একটা সুব্যবস্থার প্রয়োজন। তিনি আমার একথা হুট করে উড়িয়ে দিলেন। বল্লেন “এদেশে যে উচ্চারণ চলতি তাই ঠিক—মেডুয়াবাদীদের কাছে আমরা আবার উচ্চারণ কি শিখব? আর কোন্ প্রদেশকেই বা উচ্চারণের মানদণ্ড বলে গ্রহণ করা যেতে পারে?”

 কিন্তু এ তর্কের মীমাংসা গায়ের জোরে হয় না। সংস্কৃতের কোন বর্ণের কি উচ্চারণ তা পরীক্ষা করবার অনেক উপায় আছে, আর সে পরীক্ষায় বাঙ্গলা-সংস্কৃত উচ্চারণের ভ্যাজাল ধরা পড়বেই। “ভাষা বিজ্ঞানের পারিপাট্যে সংস্কৃত অতুলনীয়। ভাষায় যতগুলি উচ্চারণ ঠিক ততগুলি বর্ণ সংস্কৃত বর্ণমালায় স্থান পাইয়াছে। প্রত্যেক বর্ণের একটিমাত্র নির্দিষ্ট উচ্চারণ।” কিন্তু এদেশে আমরা কি সংস্কৃত বর্ণের যথানির্দিষ্ট উচ্চারণ রক্ষা করি? তা ত নয়। আমরা বর্গীয় জ, অন্তস্থ্য য, দুই ব, মূর্দ্ধণ্য ণ, দন্ত্য ন, তালব্য মূর্দ্ধণ্য ও দন্ত্য স এই সকল ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের উচ্চারণে কোন প্রভেদ মানি না। যুক্তাক্ষরে প্রতি বর্ণের পৃথক উচ্চারণ না করে বাঙলা ধরণে এক বিকৃত উচ্চারণ করে থাকি; যথা—

কৃষ্ণ (ষ্ ণ)=কিষ্ট। আত্মা=আত্তাঁ।
স্নান=স্তান। ক্ষীর (ক্‌ষীর)=ক্ষীর ইত্যাদি।

 অন্ত্যস্থ ‘য’র পৃথক উচ্চারণ বাঙ্গলায় আদৌ নাই, যুক্তাক্ষরেও নহে। সংযুক্তবর্ণে ‘ষ’কারের উচ্চারণ হয় না—যে অক্ষরে সংযুক্ত থাকে তার দ্বিরুক্তির মত উচ্চারণ হয়, যেমন—

সত্য=সত্ত। বাদ্য=বাদ্দ ইত্যাদি।