পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাংগঠনিক কাঠামোর চেয়ে, 'ধর্ম' বলতে কোনও কিছুর ‘গুণ বা বৈশিষ্ট্য'-কে চিহ্নিত করাই যুক্তির নিরিখে কাঁটায় কাঁটায় ঠিক।
O
প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম, ধর্মীয় আচরণবিধি ও মানবতা

 প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম যেমন ঈশ্বর বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কিত, ঈশ্বর বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল, তেমনই এও সত্যি - ধর্মের প্রাতিষ্ঠানিক বা সাংগঠনিক কাঠামো না থাকলে শুধুমাত্র ঈশ্বর বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলো কখনই গড়ে উঠত না। অর্থাৎ 'প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম' ও 'ঈশ্বর বিশ্বাস' উভয় উভয়ের পরিপূরক। এ যেন দুই টলোমলো মাতালের দু'জনের গায়ে ঠেকনা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা। বাস্তবিকই প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম না থাকলে ঈশ্বর-বিশ্বাস টেকে না। ঈশ্বর বিশ্বাস না থাকলে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম দাঁড়াতে পারে না।

 মানুষের ধর্ম কখনই অলীক বিশ্বাসের ভিতের উপর গড়ে ওঠা হিন্দু, মুসলিম বা খ্রিস্ট ইত্যাদি হতে পারে না। এমন ভ্রান্ত 'ধর্ম'-চিন্তা আরোপিত। অসাম্যের সমাজ কাঠামোকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই আরোপিত। মানুষ ধর্মের নামে কৃত্রিম ভাবে এমন ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ে বিভক্ত হতে পারে না। মানুষের একটাই ধর্ম 'মনুষ্যত্ব’ বা ‘মানবতা'। 'মনুষ্যত্ব’ বা ‘মানবতা'র সঙ্গে ঈশ্বর বিশ্বাসের মত অলীক বিশ্বাস একান্তভাবেই সুসম্পর্কহীন। সম্পর্ক যদি কিছু থেকে থাকে, তবে তা সংঘর্ষের। অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের সংগ্রামের। অলীকের বিরুদ্ধে বাস্তবের সংগ্রামের।

O

মানুষ ধর্মের নামে কৃত্রিম ভাবে এমন ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ে বিভক্ত হতে পারে না। মানুষের একটাই ধর্ম 'মনুষ্যত্ব’ বা ‘মানবতা।

O

 হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্ট বা অন্য যে কোনও ধর্মবিশ্বাসীরাই বিশ্বাস করেন, তাঁদের ধর্মগ্রন্থের নির্দেশিত আচরণবিধি মেনে চলাটাই সৎ জীবন যাপন ও আদর্শ জীবন যাপনের দিশারি। তাঁদের ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মশাস্ত্রগুলোর নির্দেশের বিরোধী কোনও আচরণ কখনই ‘সৎ' বা ‘আদর্শ' আচরণ বলে ধর্মবিশ্বাসীদের কাছে গণ্য হয় না। যদিও সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে অনেক ক্ষেত্রে ধর্মের নির্দেশের বা বাণীর নতুন নতুন ব্যাখ্যা হাজির করা হচ্ছে, তবুও এখনও পর্যন্ত ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মশাস্ত্রগুলোর মূল বক্তব্যকে অস্বীকার করা হয়নি।

 প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের নিরিখে একজন ধার্মিক লোক কখনই শাস্ত্রের বিধান অমান্য করে ইচ্ছে মত আচরণ করতে পারেন না। ভগবদগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

১১১