পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অস্ত্রত্যাগকারী অর্জুনকে শাস্ত্রের বিধান মেনে ক্ষত্রিয়ের 'যুদ্ধই ধর্ম' বিবেচনায় অস্ত্র ধারণ করাটাই ইহলোকের কর্তব্য বলে উপদেশ দিতে গিয়ে বলছেন- যে শাস্ত্র-বিধান না মেনে ইচ্ছে মত কাজ করে, সে সিদ্ধি, সুখ বা পরমগতি লাভ করে না। কোনটা কাজ, কোনটা অকাজ, তা নির্ণয়ের একমাত্র প্রমাণ শাস্ত্র। শাস্ত্রের বিধান জেনে শুধু তা পালনের মধ্যেই তুমি ইহলোকের কাজ করতে পার। (ভগবদ্গীতা, ১৬/২৩-২৪]

 কোরআন-এর দিকে তাকান, সেখানে বলা হচ্ছে—কোরআন সৎপথের দিশারি। যারা এর নির্দেশাবলী প্রত্যাখ্যান করে; তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। [কোরআন ৪৫(১১)]

 একইভাবে বৌদ্ধরা ত্রিপিটক'-এর বিধানকে সৎপথের দিশারি মনে করেন। খ্রিস্ট ধর্মে বিশ্বাসীরা ‘নিউ টেস্টামেণ্ট-এর নির্দেশিত পথই আদর্শ জীবন যাপনের একমাত্র পথ বলে বিশ্বাস করেন। ইহুদিরা 'ওল্ড টেস্টামেণ্ট', 'তালমুদ ও “তোরাহ'-এর বিধানগুলোকে সৎপথে চলার নির্দেশ বলে মনে করেন।

 প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলোর ক্ষেত্রে নিজস্ব বিচার-বুদ্ধি, মূল্যবোধ, সমাজ সচেতনতা—এসবের কোনও দাম নেই। ধর্মগ্রন্থগুলো যে ছক তৈরি করে দিয়েছে, সেই ছককেই ‘চিরন্তন', 'অপরিবর্তনীয়' আদর্শ বলে ধরে নিতে হবে।

 প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলোর নির্দেশিত পথ ‘মানবিক' গুণে ভরপুর, এমন একটা বিশ্বাস বহু মানুষের চেতনাকেই আচ্ছন্ন করে রেখেছে। এই আচ্ছন্নতার কারণ - ব্যাপক প্রচার। পত্র-পত্রিকার ছাপার অক্ষরকে, টেলিভিশন ও সিনেমার পর্দাকে বুদ্ধিজীবীদের কথা ও কলমকে বিশ্বাস করে মানুষ ভেবেছে—সব ধর্মই মানুষের সাম্যে বিশ্বাসী। মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টির বিরোধী।

 এই ধরনের প্রচার ও বিশ্বাস কতটা যুক্তিগ্রাহ্য, আসুন খোলা মনে একটু বিচার করে দেখি। দেখি প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম বাস্তবিকই সাম্যের সমাজ গড়তে কতটা আন্তরিক। যাঁরা আধুনিক যুগের তালে তাল মেলাতে, প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মকে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে বলেন, “'ধর্ম' মানে শনি-শীতলার পুজো, দর্গার সিরনি বা গির্জার মোমবাতি নয়, ‘ধর্ম মানে ‘way of life' বা একটি বিশেষ জীবন যাপন পদ্ধতি"—আসুন দেখা যাক, ধর্মীয় বিধান-মাফিক জীবন যাপন পদ্ধতি বা 'way of life' কতটা মানবিক। মানবিক কি না—বিচার- বিশ্লেষণের আগে এটা অবশ্যই আরও একবার পরিষ্কার করে বলে দেওয়া প্রয়োজন, প্রতিটি প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মেই পরমাত্মা বা ঈশ্বর আছেন, আছে ঈশ্বরে পূজার নানা রীতি-নীতি-আচার ইত্যাদি।

 এই একই সুরে কথা বলছেন রামকৃষ্ণ মিশনের ধর্মীয় বেত্তারা থেকে মুসলিম ধর্মগুরুরা, বাহাই ধর্মীয় নেতারা, খ্রিস্ট ধর্মের প্রচারকরা, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ধর্ম-গুরুরা পর্যন্ত।

১১২