পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ঈশ্বর-পরলোক-নিয়তি চর্চায় মগ্ন আমাদের দেশের বিজ্ঞানীদের বিরুদ্ধে দেশীয় বিজ্ঞান সংস্থাগুলো কবে এমন দৃঢ় ঋজু পদক্ষেপ নেবে? কবে এইসব বিজ্ঞান-পেশার বিজ্ঞান-বিরোধী মানুষগুলো বয়কটের সম্মুখীন হবেন? গা শোঁকাশুঁকি বন্ধ করে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে এগিয়ে আসার মত সৎ বিজ্ঞানীর সাক্ষাৎ কি আমরা অদূর ভবিষ্যতে পাব না?


 আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পদার্থবিজ্ঞানী, ওয়েনবার্গ তাঁর “দি ফাস্ট থ্রি মিনিটস্'-এ লিখেছেন, “মানুষ এ বিশ্বাসকে কিছুতেই ঠেলে দিতে পারে না, এই বিশ্বের সঙ্গে তার একটা বিশেষ যোগাযোগ আছে। মানতে চায় না, তার অস্তিত্ব মোটামুটি কতগুলো আকস্মিক ঘটনার পরিণতি। এই আকস্মিক ঘটনাগুলোর সূত্রপাত হয়েছিল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের জন্মের তিন মিনিটের মধ্যে। ..... এই পৃথিবী বিশাল ব্রহ্মাণ্ডের নগণ্য একটা ক্ষুদ্রাংশ, এটা মানা মানুষের পক্ষে সত্যিই কষ্টকর। এই বিশ্ব একদিন বিলীন হবে অসহনীয় তাপে কিংবা সীমাহীন শীতলতায়—এটা মেনে নেওয়া মানুষের পক্ষে আরও কষ্টকর। বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড যতই বোধগম্য হয়, ততই উদ্দেশ্যহীন মনে হয় তাকে।”

 ওয়েনবার্গ যখন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আবির্ভাবকে উদ্দেশ্যহীন বলছেন তখন সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ্যার অধ্যাপক জন ব্যারো টিপলারের মতই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের আবির্ভাবের মধ্যে একটা উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছিলেন। মানুষের আবির্ভাবের মধ্যে একটা উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছিলেন। মানুষের আবির্ভাবের জন্যই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড নিজেকে প্রস্তুত করেছিল। এই প্রস্তুতি-পর্ব ছিল সৃষ্টিকর্তার মর্জিমাফিক। তাঁর মতে—ধর্মতত্ত্ব ও ঈশ্বরতত্ত্বকে বাদ দিয়ে বিশ্বতত্ত্বকে কখনই জানা সম্ভব নয়!

 স্টিফেন হকিং বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী হলেও মাঝে-মধ্যে বিজ্ঞানকে সরিয়ে রেখে ঈশ্বরকে কাছে টেনে নেন। দ্বিতীয় বিয়েটাও সেরেছেন চার্চে গিয়ে ঈশ্বর ও ঈশ্বর পুত্রকে সাক্ষী রেখে। তাঁদের আশীর্বাদ প্রার্থণা করে। বাঁচোয়া, হকিংকে বিজ্ঞানীরা ও শিক্ষিত সমাজ শ্রদ্ধা করেন তাঁর বিজ্ঞান চর্চার জন্য, ঈশ্বর ও ধর্ম চর্চার জনা নয়!

 হকিং তাঁর 'এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ গ্রন্থে লিখেছেন, “ভগবান আমাদের মত প্রাণী সৃষ্টি করবেন বলেই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি এভাবে করতে বাধ্য হয়েছিলেন।”

 না, হকিং বা ঈশ্বর বিশ্বাসী কোনও বিজ্ঞানীর অন্ধ বিশ্বাসই প্রমাণ করে না—ঈশ্বরের বাস্তব অস্তিত্ব আছে। শুধু এটুকুই প্রমাণ করে, তাঁরা বিজ্ঞানী হলেও মাঝে-মধ্যে অন্ধবিশ্বাসে নতজানু।

 আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বড় মাপের বিজ্ঞানী পল ডেভিস মাঝে-মধ্যে যুক্তি ও বিজ্ঞানকে সাময়িক ছুটি দিয়ে ভাবনার পাল তুলে ভেসে যান অধ্যাত্মিক জগতের কাছাকাছি। তিনি ‘গড অ্যাণ্ড দি নিউ ফিজিক্স’ গ্রন্থে লিখছেন, “বিশ্ব

১৪৩