পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বলেছিলেন, “মার্কসবাদে বিশ্বাসী হলেও আমি কিন্তু অলৌকিক শক্তিকে অস্বীকার করতে পারি না। দীঘার কাছের এক মন্দিরে আমি এক অলৌকিক ক্ষমতাবান পুরোহিতের দেখা পেয়েছিলাম। আমার স্ত্রী গেঁটে-বাতে পায়ে ও কোমরে মাঝে-মাঝে খুব কষ্ট পান। একবার দীঘায় বেড়াতে গিয়ে ওই পুরোহিতের খবর পাই। শুনলাম উনি অনেকের অসুখ-টসুখ ভাল করে দিয়েছেন। এক সন্ধ্যায় আমরা স্বামী-স্ত্রীতে গেলাম মন্দিরে। পুজো দিলাম। সন্ধ্যারতির পর পুরোহিতকে প্রণাম করে নিজের পরিচয় দিয়ে আসার উদ্দেশ্য জানালাম। পুরোহিত বিড়-বিড় করে মন্ত্র পড়ে আমার স্ত্রীর কোমর ও পায়ে হাত বুলিয়ে দিলেন। এক সময় জিজ্ঞেস করলেন, 'কি, এখন ব্যথা কমেছে না?' অবাক হয়ে গেলাম আমার স্ত্রীর জবাব শুনে। ও নিজের শরীরটা নাড়া-চাড়া করে বলল, 'হ্যাঁ, ব্যথা অনেক কমেছে।' এইসব অতি-মানুষেরা হয়ত কোনও দিনই আপনার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে তাঁর অলৌকিক ক্ষমতার প্রমাণ দিতে হাজির হবেন না, কিন্তু এদের অলৌকিক ক্ষমতার প্রমাণ পাওয়ার পর তা অস্বীকার করব কি ভাবে?”

 আমি বলেছিলাম “যতদূর জানি আপনার স্ত্রীর বাতের ব্যথা এখনও আছে।”

 আমার মুখের কথা প্রায় কেড়ে নিয়ে প্রাক্তন চিফ সেক্রেটারি জবাব দিয়েছিলেন, “পুরোহিত অবশ্য আরও কয়েকবার ঝেড়ে দিতে হবে বলে জানিয়েছিলেন। কাজের তাগিদে আর যাওয়া হয়নি। ত্রুটিটা আমাদেরই।”

 এই সাময়িক আরোগ্যের কারণ পুরোহিতের প্রতি রোগিণীর বিশ্বাস, পুরোহিতের অলৌকিক কোনও ক্ষমতা নয়। অথবা, পুরনো রোগের নিয়ম অনুসারেই স্বাভাবিকভাবেই সেই সময় গেঁটে-বাতের প্রকোপ কিছুটা কম ছিল।


 অর্শ রোগীদের অনেকেরই হাতের আঙুলে শোভিত হয় আড়াই প্যাঁচের একটা রুপোর তারের আংটি। যাঁরা এই আংটি পরেন, তাঁদের কাছে কোনও অর্শ রোগী আংটি ধারণ করে নিরাময় চাইলে সাধারণভাবে আড়াই-প্যাঁচি আংটির ধারক তাঁর আংটির তারের ছোট্ট একটা টুকরো কেটে দেন। ওই টুকরো স্যাঁকরাকে দিয়ে আড়াই-প্যাঁচি আংটি তৈরি করে ধারণ করেন অর্শ রোগী। ধারণ করার পর অর্শ রোগ সত্যিই কি সারে? আমি দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়ে একটা অনুসন্ধান চালিয়েছিলাম। সাধারণত যাঁদের হাতেই আড়াই-প্যাঁচি আংটি দেখেছি, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করেছি, আংটি পরে কতটা উপকৃত হয়েছেন। শতকরা ৩০ ভাগের মতো ধারণকারী জানিয়েছেন, আংটি পরে উপকৃত হয়েছেন। শতকরা ৪৫ ভাগের মত জানিয়েছেন, আংটির গুণ আছে কি না, এই বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্তে আসার মতো কিছু বোঝেননি। বাকি ২৫ ভাগ জানিয়েছেন, কিছুই কাজ হয়নি। অর্শ অনেক সময় স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়মেই

৮৭