পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কমাসের মধ্যে রাত্রির এমনি পরিবর্তন দেখবে আশা করে নি অমৃত। এই বিচিত্র দৃশ্য দেখে আজ চমকে উঠেছে অমৃত। বারের সামনে দুএকটা গাড়ি এসে থামছে, গাড়ি থেকে স্বপ্লবাসা নারী-পুরুষের দল কলরব করে ওখানে ঢুকছে। সন্ধ্যার আলো জুলে ওঠে-ময়দানের দিকে হকারদের পশরার সামনে ভিড় জমেছে। ওদের বিক্রিবাটার কমাই নেই। চৌরঙ্গী এলাকা রঙ্গীন পোষাক পরা মেয়ে-পুরুষের ভিড়ে ভরে থাকে এখন। ওই হাসির আড়ালে ফুটে রয়েছে বিবর্ণ কান্না। তাকে ঢাকার জন্যই এই বর্ণ-বৈচিত্র্য। হকারদের ওখানে মোমবাতিগুলো সারবন্দী দেওয়ালীর আলোক-সজার মত জুলছে। ‘বার’ থেকে দু’একজন বের হচ্ছে। তাদের সোজা হয়ে চলার অবস্থা নেই। কোনরকমে গিয়ে গাড়িতে, ট্যাক্সিতে উঠে চলে যায় তারা। এই মানুষগুলোর বিকৃত কামনার জগতে আজ রাত্রিও সামিল হয়ে গেছে। অমৃত চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। এক ফঁাকে বারের দরজা খুলে কে ঢুকছে। একঝলক বন্ধ হাওয়ার সঙ্গে ওখান থেকে ভেসে আসে। দ্রুততালে জাজ’-এর শব্দ-কাদের উল্লসিত মদ্যপ কঠের হল্লার শব্দ মিশেছে তাতে । অমৃত সরে এল। ওই কামনার ফেনিল আবর্তভরা পরিবেশ তাঁর জীবনে অনুপস্থিত। শুধুমাত্র বেঁচে থাকার পাথেয় জোগাড় করতে যাদের দিন কেটে যায় তাদের জীবনে ওটা স্বপ্ন-বিকৃত স্বপ্নই। কিন্তু ভাবতে পারে না। রাত্রি ওইখানে নেমে যাবে। বাড়িটাকে ঘিরে ধোয়া আর আঁধার জন্মেছে। সুধাময়ী যেন ওর পথ চেয়ে ছিল। অমৃতকে ফিরতে দেখে শুধোয়। ---কি হল রে ? 'ইনটারভিউ কেমন হল ? অমৃতের মনটা ভালো নেই। দেখেছে রাত্রির সেই অবস্থা। মায়ের কথায় জানায়-- হ’ল ভালোই। —কিছু বললে তারা ? সুধাময়ীর কণ্ঠে ব্যাকুলতা ফুটে ওঠে। বসন্তবাবুও বাড়ি ফিরেছেন। তিনি বসেছিলেন। ওদিকের দাওয়ায়। র্তার মনে হয় কোন আশার কথাই শুনবেন তিনি, যদি অমৃতের কিছু একটা গতি হয় তিনি ওই চক্র থেকে মুক্তি পাবেন। > Obr