পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ওদের হাততালির শব্দে সাবিত্রীর চমক ভাঙে। এতক্ষণ যেন গানের জগতে হারিয়ে গেছিল। সে । আজকের আসরে তার অনুষ্ঠান সবচেয়ে সুন্দর হয়েছে। শ্রোতারাও স্বীকার করে। সাবিত্রী ওই জয়ধ্বনির মধ্য দিয়ে নেমে এল মঞ্চ থেকে। সামনে দাঁড়িয়ে আছে কাজলবাবু। সে-ও অপীর আগ্রহ নিয়ে তার অনুষ্ঠান শুনছিল। ওকে সামনে দেখে বলে কাজলবাবু! —-অপূর্ব গেয়েছে সাবিত্রী। জানতাম তুমি ভালো গাইবে, কিন্তু এতো ভালো গাইবে তা ভাবি নি। কনগ্রাচুলেশনস। সাবিত্রী ওর দিকে চেয়ে থাকে। ওই কৃতিত্বের সে-ও যেন শরিকান। হঠাৎ কি ভেবে কাজলকে প্রণাম করতে অবাক হয় কাজলবাবু। --এ্যাই, এ্যাই, আরে-- ওর হাত ধরে কাজলবাবু তুলল সাবিত্রীকে। সাবিত্রীর সারা দেহ কঁপিছে ওই ছোয়ায়। হারানো দিনের সেই ছবিগুলো ভেসে আসে সাবিত্রীর চোখের সামনে। কাজল দেখছে সাবিত্রীকে। ওর সারা দেহের অনুরণন কাজলের সারা মনে কি আবেশ এনেছে। কাজল সাবিত্রীকে প্রথম দিন ওই স্কুলের সামান্য কাজ করতে দেখে অবাক হয়েছিল। দেখেছিল সাবিত্রীর মুখে-চোখে বেদনার বিবর্ণিতাকে। সাবিত্রীর গান গাইবার গলা ছিল, সেই দিনের তরুণটি ভাবে নি। সাবিত্রী এইভাবে ফুরিয়ে যাবে। তাই ওকে সচেতন করার জন্যই কঠিনভাবে আঘাত করেছিল। দেখেছিল তাতে কাজ হয়েছে। একটা ভালো আশ্রয়ও পেয়েছিল সাবিত্রী। নিজেকে গড়ে তোলার সাধনা করেছে। আজ সে এগিয়ে এসেছে এতখানি । কাজলবাবু ওর খবর রাখেন। সাবিত্রীকে মন থেকে মুছে ফেলতে পারেন নি। আজ তার অনেক বাধা, তবু মনে হয় কাজলের সেই প্রথম যৌবনের বহু দুঃখকষ্টের দিনে দেখা, চেনা মেয়েটি তার মনের অনেক খানি জুড়ে রয়ে গেছে। SSV