পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গাড়িটা মস্তরগতিতে এইবার চলেছে। চৌরঙ্গীর প্রশস্ত রাস্তা দিয়ে। এখানে ওই কলরব চীৎকার নেই। ময়দানের দিকের গাছগাছালির বুকে আঁধার জমছে। ঐ পাশের আকাশ-ছোঁয়া বাড়িগুলোর চিকন নরম আলোর বর্ণালী ফুটে ওঠে। এ কোন বিচিত্র জগৎ, জীবন এখানে অন্য খাতে প্রবাহিত হয়। দৈন্য-দারিদ্র্যের ছোয়াটাকে ছাড়িয়ে মাটির মালিন্য এড়িয়ে ওরা আকাশে মাথা তুলেছে। নীচের তলার সঙ্গে সব সম্পর্ক এখানে অনুপস্থিত। পটল চুপ করে কি ভাবছে। বসস্তবাবুর দিকে চাইল। তখনও বাসস্তবাবু বলে চলেছেন। হতাশার সুরে। —রজনীর কাছে গেছলাম। এককালে একসঙ্গে কাজ করেছি, এখন সে একজন কেউকেটা। ভাবলাম হয়তো মনে থাকবে আমার কথা, তাই গেছলাম ওর সঙ্গে দরখাস্ত একখানা নিয়ে দেখা করতে যদি একটা পেনসন-টেনশন করিয়ে দেয়। পটল অবাক হয় এককালের সেই বিদ্রোহী তরুণকে এইভাবে দেখে । ওর মুখেচোখে কি অসহায় মালিন্য ফুটে উঠেছে। 4. পটল এখন নিজের চেষ্টায় বেশ গুছিয়ে নিয়েছে। এখন সমাজে তার নামডাক, মান-খাতিরও আছে। এখন ধুলো মুঠো ধরলে তা পটলের হাতে সোনামুঠো হয়ে আসে। কিন্তু পারে নি সেদিন । হঠাৎ কোন রন্ধপথে সে একটা রহস্যময় সমৃদ্ধ জগতের প্রবেশপথ আবিষ্কার করে ফেলে, তারপর থেকেই ধাপে ধাপে সে ভাগ্যের শিখরে উঠতে শুরু করেছে। পটল আজি পেয়েছে অনেক কিছু। বসন্তবাবুর সঙ্গে, এইখানেই তার তফাৎ। তিনি হারিয়ে গেছেন আর তারই ছাত্র পটল আজ নিজেকে খুঁজে পেয়েছে। প্রতিষ্ঠিত করেছে। বসস্তবাবু থেমে যান। পটল শুধোয়-রজনীবাবু কি বললেন? রজনীবাবুর আজকের ওই ব্যবহারটা তার প্রাণে বেজেছে। তবু সে সব কথা মুখ ফুটে জানাতে তিনি চান না। পটল বলে। —শুনেছিলাম। আপনার খুব চেনা-জানা লোক। বসস্তবাবু মাথা নাড়েন মাত্র। পটলও তীক্ষ সন্ধানী দৃষ্টিতে ওঁকে দেখছে—ওঁর \ό 8