পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাবিত্রী আজি এই ট্যাক্সি থেকে কাজলদাকে নামতে দেখে কেমন থেমে গিয়েছিল। আড়ালে সরে গিয়েছিল। দেরী তার ওরই জন্য। তাই চা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। অন্যভাবে কথাটা বলে সাবিত্রী। --ভাঙনি ছিল না দোকানে তাই দেরী হয়ে গেল। এখন নাকি ভাঙনি মিলছে না কোথাও । সরল্যাদি ওকে দেখেছে। লক্ষ্মৗদি বলে। --আর সেই অবসরে একটু— --তাই নাকি ? হাসছে সকলেই। সাবিত্রীর মনে হয়, ওর সারা গায়ে ওরা চাবুকের ঘা বসিয়ে চলেছে নিষ্ঠুরভাবে। মুখ বুজে। তবু সব সইতে হবে তাকে। চুপ করে সাবিত্রী সরে এল। সিড়ির নীচে একটা টুলে তার বসার ঠাই। সেখানের প্রায়ান্ধকার ঠাইটায় চুপ করে বসে কি ভাবছে সে ! লাজায় অপমানে চোখ জলে ভরে আসে । সুরাটা উঠছে। কাজলদা’র গলা তার খুব চেনা। ওই সুরে মিশিয়ে আছে কতো স্মৃতি। বোধহয় কাজলবাবুও এই গানের স্কুলে সপ্তাহে একদিন করে ক্লাশ করতে আসবেন! ওর নাম শুনলেই আজ থেকে অনেক ছাত্রী আসছে। ভর্তি হতে। স্কুল জমে উঠছে। সাবিত্রীর ভয় হয় একদিন তাকে দেখবে কাজলদা এখানে এই ঝিগিরি করতে । সেদিন লােজায় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে যাবে সাবিত্রী। কিন্তু মনের সেই ভয়টাকেও তাকে জয় করতে হবে। বাঁচতে হবে তাকে। এই অপমান এই লাঞ্ছনা সয়েও তাকে বাঁচতে হবে। এই সম্মানবোধ তাব কাছে আজ। অর্থহীন হয়ে গেছে। অভাব আর বেঁচে থাকার জন্যেই তাকেও সব বিসর্জন দিতে হবে। সেই বোধটাই সাবিত্রীকে যেন আরও কঠিন সহনশীল করে তুলেছে। সুরাটা তাকে আনমনা করে তোলে । নেমপ্লেটটা এককালে বেশী সুদৃশ্য ছিল আর আভিজাত্যের পরিচয়ই বহন করতো। 88