পাতা:আমেরিকার নিগ্রো - রামনাথ বিশ্বাস.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১ মনুষ্যত্ব লাভ করতে হবে। কাউকে জিজ্ঞাসা না করেই এই প্রশ্নের উত্তর নিজের কাছ থেকেই পেতে হবে ঠিক করলাম। নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছিল, ঘৃণা ক্রমেই বেড়ে চলছিল। পায়ের উপর গড়ানাে পাথর পড়ছিল। পা অনেক স্থানে ক্ষত হয়েছিল। একটুও ব্যথা হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল নিউটনের কথা; নিউটনকে যখন আমেরিকানরা প্রজ্জ্বলিত অগ্নিতে ফেলে দিয়েছিল তখন তার শরীর চর চর করে জলছিল। আমার পায়ে ব্যথা হবে কেন? হওয়া উচিত নয়। পনের মিনিট চলার পর পাহাড়ের বুকের মধ্যে দাগ কাটা একটা পথ পেলাম। পশ্চিমের সূর্যের আলো নাকে মুখে পড়ল। চোখ দুটো বুজে আসছিল কিন্তু বুজতে দিলাম না। আমার আবার কষ্ট ? পৃথিবীতে জন্মেছি মাত্র। জাতভাইয়া আমাকে মানুষ বলে। খেতকায়রা আমাকে মানুষ বলে না, তারা আমাকে নিগ্রো বলে। নিগ্রো মানুষ নয়, শুধু নিগ্রো। নিগ্রোর আবার চোখের জ্বালা কি? এই ত আমাদের মনিবের দুটা খচ্চর আছে। শীতের সময়ও খচ্চর দুটো গাড়ি টেনে সহরে যায়। আমার মাও শীতের সময় সামান্য একটি পুলওভার গায়ে দিয়ে কাজে যান। আমেরিকানরা যখন গাড়ি হাঁকিয়ে কারখানায় পৌছে, তখন গাড়ি হতে নেমেই মস্তবড় একটি পেয়ালা ভর্তি কাফিতে মুখ দেয়। তাদের ঠোট গরম হয়, তারা শাস্তির নিশ্বাস ফেলে। আর আমি এবং আমার মা এতদূর হাটার পর পরিশ্রান্ত হয়ে জলের কলে মুখ লাগিয়ে জল চুষে খাই। আমাদের ঠোটে যখন ঠাণ্ডা জল লাগে তখন ঠোট জলতে থাকে। গরম কাফির মত আমরা কলের জল একটু একটু করে খাই। কল মাত্র একটি। মজুর প্রায় দু’শ। জল খেতেও লাইন দিতে হয়। এক দিকে প্রবল সূর্যের আলাে আমার চোখ দুটাকে ঝলসিয়ে দিচ্ছিল, অন্য দিকে