পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হইয়া গেল। অর্থাৎ আমি যে তাহার বাড়ি নিমন্ত্রণ রক্ষা করিতে যাইব, ইহা যেন সে স্বপ্নেও ভাবে নাই। যাহা হউক, রাসবিহারী আমার যথেষ্ট খাতির-যত্ন করিল।

 পাশের যে-ঘরে আমায় লইয়া গেল, সেটায় থাকিবার মধ্যে আছে খান-দুই-তিন সিসম কাঠের দেশী ছুতারের হাতে তৈরি খুব মোটা মোটা পায়া ও হাতলওয়ালা চেয়ার এবং একখানা কাঠের বেঞ্চি। দেওয়ালে সিন্দুর-চন্দন লিপ্ত একটি গণেশমূর্তি।

 একটু পরে একটি বালক একখানা বড় থালা লইয়া আমার সামনে ধরিল। তাহাতে কিছু আবীর, কিছু ফুল, কয়েকটি টাকা, গোটাকতক চিনির এলাচদানা, মিছরিখণ্ড, একছড়া ফুলের মালা। রাসবিহারী সিং আমার কপালে কিছু আবীর মাখাইয়া দিল, আমিও তাহার কপালে আবীর দিলাম, ফুলের মালাগাছি তুলিয়া লইলাম। আর কি করিতে হইবে না-বুঝিতে পারিয়া আনাড়িভাবে থালার দিকে চাহিয়া আছি দেখিয়া রাসবিহারী সিং বলিল-আপনার নজর, হুজুর। ও আপনাকে নিতে হবে। আমি পকেট হইতে আর কিছু টাকা বাহির করিয়া থালার টাকার সঙ্গে মিশাইয়া বলিলাম-সকলকে মিষ্টিমুখ করাও এই দিয়ে।

 রাসবিহারী সিং তারপর আমাকে তাহার ঐশ্বর্য দেখাইয়া লইয়া বেড়াইল। গোয়ালে প্রায় ষাট-পঁয়ষট্টিটি গরু। সাত-আটটি ঘোড়া আস্তাবলে-দুটি ঘোড়া নাকি অতি সুন্দর নাচিতে পারে, একদিন নাচ আমায় সে দেখাইবে। হাতি নাই কিন্তু শীঘ্র কিনিবার ইচ্ছা আছে। এ-দেশে হাতি না-থাকিলে সে সম্ভ্রান্ত লোক হয় না। আট-শ মন গম চাষে উৎপন্ন হয়, দু-বেলায় আশি-পঁচাশিজন লোক খায়, সে নিজে সকালে নাকি দেড় সের দুধ ও এক সের মিকানীর মিছরি স্নানান্তে জলযোগ করে। বাজারের সাধারণ মিছরি সে কখনো খায় না, বিকানীর মিছরি ছাড়া। মিছরি খাইয়া জলযোগ যে করে, সে এ-দেশে বড়লোক বলিয়া গণ্য হয়- বড়লোকের উহা আর একটি লক্ষণ।