পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মধ্যে মারা গিয়াছে। এ বর্বর প্রাচুর্য তবে কোন্ কাজে লাগে? নিরীহ গাঙ্গোতা প্রজা ঠেঙাইয়া এ প্রাচুর্য অর্জন করার ফলে কাহার কি সুবিধা হইতেছে? অবশ্য রাসবিহারী সিং-এর মান বাড়িতেছে।

 ভোজদ্রব্যের প্রাচুর্য দেখিয়া কিন্তু তাক্ লাগিল। এত কি একজনে খাইতে পারে? হাতির কানের মতো বৃহদাকার পুরী খান-পনের, খুরিতে নানা রকম তরকারি, দই, লাড্ডু, মালপো, চাটনি, পাঁপর। আমার তো এ চার বেলার খোরাক। রাসবিহারী সিং নাকি একা এর দ্বিগুণ আহার্য উদরস্থ করিয়া থাকে একবারে।

 আহার শেষ করিয়া যখন বাহিরে আসিলাম, তখন বেলা আর নাই। গাঙ্গোতা প্রজার দল উঠানে পাতা পাতিয়া দই ও চীনা ঘাসের ভাজা দানা মহা আনন্দে খাইতে বসিয়াছে। সকলের কাপড় লাল রঙে রঞ্জিত, সকলের মুখে হাসি। রাসবিহারীর ভাই গাঙ্গোতাদের খাওয়ানোর তদারক করিয়া বেড়াইতেছে। ভোজনের উপকরণ অতি সামান্য, তাতেই ওদের খুশি ধরে না।

 অনেক দিন পরে এখানে সেই বালক নর্তক ধাতুরিয়ার নাচ দেখিলাম। ধাতুরিয়া আর একটু বড় হইয়াছে, নাচেও আগের চেয়ে অনেক ভালো। হোলি উৎসবে এখানে নাচিবার জন্য তাহাকে বায়না করিয়া আনা হইয়াছে।

 ধাতুরিয়াকে কাছে ডাকিয়া বলিলাম-চিনতে পার ধাতুরিয়া?

 ধাতুরিয়া হাসিয়া সেলাম করিয়া বলিল-জি হুজুর। আপনি ম্যানেজারবাবু! ভালো আছেন হুজুর?

 ভারি সুন্দর হাসি ওর মুখে। আর ওকে দেখিলেই মনে কেমন একটা অনুকম্পা ও করুণার উদ্রেক হয়। সংসারে আপন বলিতে কেহ নাই, এই বয়সে নাচিয়া গাহিয়া পরের মন জোগাইয়া পয়সা রোজগার করিতে হয়, তাও রাসবিহারী সিং-এর মতো ধনগর্বিত অরসিকদের গৃহপ্রাঙ্গণে।

 জিজ্ঞাসা করিলাম- এখানে তো অর্ধেক রাত পর্যন্ত নাচতে গাইতে হবে, মজুরি কি পাবে?