বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আরণ্যক
১০৭

বেশ লাগিতেছিল একজন তরুণ শিল্পীর শিল্পশিক্ষার আকুল আগ্রহের গল্প। বলিলাম, তার পর?

 —হেঁটে সেখানে গেলাম। ভিটলদাস দেখি বুড়ো মানুষ। একমুখ সাদা। দাড়ি। আমায় দেখে বললেন—কি চাই? আমি বললাম—আমি ছক্করবাজি নাচ শিখতে এসেছি। তিনি যেন অবাক হয়ে গেলেন। বললেন-আজকালকার ছেলেরা ঐ পছন্দ করে? এ ত লোকে ভুলেই গিয়েছে। আমি তাঁর পায়ে হাত দিয়ে বললাম—আমায় শেখাতে হবে, বহুদূর থেকে আসছি আপনার নাম শুনে। তাঁর চোখ দিয়ে জল এল। বললেন— আমার বংশে, সাতপুরুষ ধরে এই নাচের চর্চা। কিন্তু আমার ছেলে নেই। বাইরের কেউ এসে শিখতেও চায় নি আমার এত বয়স হয়েছে, এর মধ্যে। আজ তুমি প্রথম এলে। আচ্ছা, তোমায় শেখাব। তা বুঝলেন হুজুর, এত কষ্ট করে শেখা জিনিস। এখানে গাদোতাদের দেখিয়ে কি করব? কলকাতায় গুণের আদর আছে। সেখানে নিয়ে যাবেন,হুজুর?

 বলিলাম-আমার কাছারিতে একদিন এস ধাতুরিয়া, এ-সম্বন্ধে কথা বলব।

 ধাতুবিয়া আশ্বস্ত হইয়া চলিয়া গেল।

 আমার মনে হইল উহার এত কষ্ট করিধু শেখ গ্রাম্য নাচ কলিকাতায় কে-ই বা দেখিবে, আর ও বেচারী একা সেখানে কি-ই বা করিবে?


অষ্ঠম পরিচ্ছেদ

 প্রকৃতি তার নিজের ভক্তদের যা দেন, তা অতি অমূল্য দান। অনেক দিন ধরিয়া প্রকৃতির সেবা না করিলে কিন্তু সে দান মেলে না। আর কি ঈর্ষার বজার এতিরাণীপ্রকৃতিকে যখন চাহিষ, তখন প্রকৃতিকে লইয়াই থাকিতে