Y S 0 আরণ্যক গভীর রাত্রে ঘরের বাহিরে একা আসিয়া দাড়াইয়া দেখিয়াছি, অন্ধকার প্রান্তরের অথবা ছায়াহীন ধুধু জ্যোৎস্না-ভরা রাত্রির রূপ। তার সৌন্দর্য্যে পাগল হইতে হয়-একটুও বাড়াইয়া বলিতেছি না-আমার মনে হয় দুর্বলচিত্ত মানুষ যাহার, তাহাদের পক্ষে সে-রূপ না দেখাই ভাল, সর্বনাশী রূপ সে, সকলের পক্ষে তার টাল সামলানো বড় কঠিন । তবে একথাও ঠিক, প্রকৃতিকে সে-রূপে দেখাওভাগ্যের ব্যাপার। এমন বিজন বিশাল উন্মুক্ত আরণ্য-প্রাস্তর, শৈলমালা, বনঝাউ, আর কাশের বন কোথায় যেখানে সেখানে ? তার সঙ্গে যোগ চাই গভীর নিশীথিনীর নীরবতার ও তার অন্ধকার বা জ্যোৎস্নার-এত যোগাযোগ সুলভ হইলে পৃথিবীতে, কবি আর পাগলে দেশ ছাইয়া যাইত না ? একদিন প্রকৃতির সে-রূপ কি-ভাবে প্রত্যক্ষ করিয়াছিলাম, সে ঘটনা বলি । পূর্ণিয়া হইতে উকিলের ‘তার” পাইলাম পরদিন সকাল দশটার মধ্যে আমায় সেখানে হাজির হইতে হইবে । অন্যথায় স্টেটের একটা বড় মোকদ্দমায় আমাদের হার সুনিশ্চিত । আমাদের মহাল হইতে পূর্ণিয়া পঞ্চান্ন মাইল দূরে। রাত্রের ট্রেন মাত্র একখানি, যখন “তার’ হস্তগত হইল তখন সতের মাইল দূরবত্তী কাটারিয়া স্টেশনে গিয়া সে-ট্রেন ধরা অসম্ভব । ঠিক হইল এখনই ঘোড়ায় রওনা হইতে হইবে। কিন্তু পথ সুদীর্ঘ বটে, বিপৎসস্কুলও বটে, বিশেষ করিয়া এই রাত্রিকালে, এই আরণ্য-অঞ্চলে । সুতরাং তহশীলদার সুজন সিং আমার সঙ্গে যাইবে ইহাও ঠিক হইল। সন্ধ্যায় দু-জনে ঘোড়া ছাড়িলাম। কাছারি ছাড়িয়া জঙ্গলে পড়িতেই কিছু পরে কৃষ্ণা তৃতীয়ার চাদ উঠিল। অস্পষ্ট জ্যোৎস্নায় বন-প্রান্তর আরও অদ্ভুত দেখাইতেছে। পাশাপাশি দু-জনে চলিয়াছি-আমি আর সুজন সিং । পথ কখনও উঁচু, কখনও নীচু সাদা বালির উপর জ্যোৎস্না পড়িয়া চকচক করিতেছে।
পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৪
অবয়ব