পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SR अन्निश्वरक কাশের মাথায় বুট বঁাধিয়া জঙ্গলে পথ ঠিক করিয়া রাখিয়াছে, রাস্তা বলিয়া কিছু নাই, এই কাশের ঝুটি দেখিয়া এই গভীর জঙ্গলে পথ ঠিক করিয়া লইতে হয়। একবার সুজন সিং বলিল-হুজুর। এ-পথটা যেন নয়, পথ ভুলেছি আমরা। আমি সপ্তর্ষিমণ্ডল দেখিয়া ধ্রুবতারা ঠিক করিলাম-পূর্ণিয়া আমাদের মহাল হইতে খাড়া উত্তর, তবে ঠিকই আছি, সুজনকে বুঝাইয়া বলিলাম। সুজন বলিল-না। হুজুর, কুশীনদীর খেয়া পেরুতে হবে যে, খেয়া পার হয়ে তবে সোজা উত্তর যেতে হবে। এখন উত্তর-পূব কোণ কেটে বেরুতে হবে। অবশেষে পথ মিলিল । জ্যোৎস্না আরও ফুটিয়াছে--সোঁ কি জ্যোৎসু ! কি রূপ রাত্রির ! নির্জন বালুর চরে, দীর্ঘ বনঝাউয়ের জঙ্গলের পাশের পথে জ্যোৎস্না যাহার কখনও দেখে নাই, তাহারা বুঝিবে না। এ জ্যোৎস্নার কি চেহারা !! এমন উন্মুক্ত আকাশ-তলে-ছায়াহীন, উদাস গভীর জ্যোৎস্নাভিরা রাত্রিতে, বনপাহাড়প্রান্তরের পথের জ্যোৎস্না, বালুচরের জ্যোৎস্না-ক'জন দেখিয়াছে ? উঃ সে কি ছুটি ! পাশাপাশি চলিতে চলিতে দুই ঘোড়াই হঁপাইতেছে, শীতেও ঘাম দেখা দিয়াছে আমাদের গায়ে । এক জায়গায় বনের মধ্যে একটা শিমুলগাছের তলায় আমরা ঘোড়া থামাইয়া একটু বিশ্রাম করি, সামান্য মিনিট-দশোক । একটা ছোট নদী বহিয়া গিয়া অদূরে কুশীনদীর সঙ্গে মিশিয়াছে, শিমুল গাছটাতে ফুল ফুটিয়াছে, বনটা সেখানে চারি ধার হইতে আসিয়া আমাদের এমন ঘিরিয়াছে যে, পথের চিহ্নমাত্র নাই, অথচ খাটো খাটো গাছপালার বন-শিমুল গাছটাই সেখানে খুব উচু, বনের মধ্যে মাথা তুলিয়া দাড়াইয়া আছে। দু’জনেরই জল-পিপাসা পাইয়াছে দারুণ । জ্যোৎস্না মান হইয়া আসে। অন্ধকার বনপথ, পশ্চিম দিগন্তের দূর শৈলমালার পিছনে শেযরাত্রির চন্দ্র ঢলিয়া পড়িয়াছে । ছায়া দীর্ঘ হইয়া আসিল, পাৰী-পাখালির শব্দ নাই কোন দিকে, শুধু ছায়া, ছায়া, অন্ধকার মাঠ, অন্ধকার বন । শেষ রাত্রির বাতাস বেশ ঠাণ্ড হইয়া উঠিল । ঘড়িতে রাত প্রায় চারটিা ।