পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক 9 ܠ এখানকার জঙ্গলে ও-সব লতা-ফুল নেই। তাই পুতে দিচ্ছি, গাছ হয়ে দু-বছরের মধ্যে ঝাড বেঁধে যাবে, বেশ দেখাবে। লোকটার উদ্দেশ্য বুঝিয়। তাঙ্গার উপর আমার শ্রদ্ধা হইল । লোকটা সম্পূর্ণ বিনা-স্বার্থে একটা বিস্তৃত বন্যভূমির সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করিবার জন্য নিজের পয়সা ও সময় ব্যয় করিতেছে, যে বনে তাহার নিজের ভূস্বত্ব কিছুই নাই-কি অদ্ভুত লোকটা ! যুগল প্রসাদকে ডাকিয়া এক গাছের তলায় দুজনে বসিলাম। সে বলিলআমি এর আগেও এ কাজ করেছি। হুজুর, লবটুলিয়াতে যত বনের ফুল দেখেন, ফুলের লতা দেখেন, ও সব আমি আজ দশ-বারো বছর আগে কতক পূর্ণিয়ার বন থেকে, কতক দক্ষিণ ভাগলপুরের লছমীপুর স্টেটের পাহাড়ী জঙ্গল থেকে এনে লাগিয়েছিলাম। এখন একেবারে ও-সব ফুলের জঙ্গল বেঁধে গিয়েছে। --তোমার কি এ কাজ খুব ভাল লাগে ? -লবটুলিয়া বইহারের জঙ্গলটিা ভারি চমৎকার জায়গা-ওই সব ছোটখাটো পাহাড়ের গায়ে কি এখানকার বনে-ঝোপে নতুন নতুন ফুল ফোটাব। এ আমার বহুদিনের সখ । --কি ফুল নিয়ে আসতে ? --কি ক’রে আমার এদিকে মন গেল, তা একটু আগে হুজুরকে বলি। আমার বাড়ী ধরমপুর অঞ্চলে। আমাদের দেশে বুনো ভাণ্ডীর ফুল একেবারেই ছিল না। আমি মহিষ চরিয়ে বেড়াতাম ছেলেবেলায় কুশীনদীর ধারে ধারে, আমার গ থেকে দশ-পনেরো কোশ দূরে। সেখানে দেখতাম বনে-জঙ্গলে, মাঠে বুনো ভাণ্ডীর ফুলের বড় শোভা । সেখান থেকে বীজ নিয়ে গিয়ে দেশে লাগাই, এখন আমাদের অঞ্চলের পথের ধারে বনকোপে কি লোকের বাড়ীর পেছনে পোড়ো জমিতে ভাণ্ডীর ফুলের একেবারে জঙ্গল । সেই থেকে আমার এই দিকে মাথা গেল। যেখানে যে ফুল নেই, সেখানে সেই ফুল, গাছ, লতা নিয়ে পুতব, এই আমার সখ। সারাজীবন ওই ক’রে ঘুরেছি। এখন আমি ও-কাজে ঘুণ হয়ে গেছি।