অর্থব্যয়ও কম করি নাই। একদিন গননারী তেওয়ারীর মুখে শুনিলাম, কারো নদীর ওপারে জয়ন্তী পাহাড়ের জঙ্গলে এক প্রকার অদ্ভুত ধরণের বন্যপুষ্প হয়— দেশে তার নাম দুধিয়া ফুল। হলুদ গাছের মত পাতা, অত বড়ই গাছ—খুব কম্বা একটা ডাটা ঠেলিয়া উচুদিকে তিন চার হাত ওঠে। একটা গাছে চারপাঁচটা ভাটা হয়, প্রত্যেক ডাটায় চারটি করিয়া হলদে রঙের ফুল ধরে দেখিতে খুব ভাল তো বটেই, ভারি সুন্দর তার সুবাস। রাত্রে অনেক দূর পর্যন্ত সুগন্ধ ছড়ায়। সে ফুলের একটা গাছ যেখানে একবার জন্মায় দেখিতে দেখিতে এত হু-হু বংশবৃদ্ধি হয় যে, দু-তিন বছরে রীতিমত জঙ্গল বাধিয়া যায়।
শুনিয়া পর্যন্ত আমার মনের শান্তি নষ্ট হইল। ঐ ফুল আনিতেই হইবে। গননারী বলিল, বর্ষাকাল ভিম হইবে না, গাছের গেঁড় আনিয়া পুতিতে হয়জল না পাইলে মরিয়া যাইবে।
পয়সা-কড়ি দিয়া যুগল প্রসাদকে পাঠাইলাম। সে বহু অনুসন্ধানে জয়ন্তী পাহাড়ের দুর্গম জঙ্গল হইতে দশ-বারো গণ্ডা গেঁড় যোগাড় করিয়া আনিল।
প্রায় তিন বছর কাটিয়া গিয়াছে।
এই তিন বছরে আমার অনেক পরিবর্তন ঘটিয়াছে। লবটুলিয়া ও আজমাবাদের বন্ধু প্রকৃতি কি মায়া-কাজল লাগাইয়া দিয়াছে আমার চোখে-শহরকে একরকম ভুলিয়া গিয়াছি। নির্জনতার মোহ, নক্ষত্রভরা উদার আকাশের মোহ আমাকে এমন পাইয়া বসিয়াছে যে, মাধ্যে একবার কয়েক দিনের জন্য পাটনায় গিয়া ছটফট করিতে লাগিলাম কবে পিচ-ঢালা বঁধাধরা রাস্তার গণ্ডি এড়াইয়া