বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক Sey সাহচর্য্যে নিজেদের অবসন্ন মনকে তাজা করিয়া লইয়া ফিরিত । তাহা হইবার যো নাই, যাহার জমি সে প্রজাবিলি না করিয়া জমি ফেলিয়া রাখিবে কেন ? আমি প্রজা বসাইবার ভার লইয়া এখানে আসিয়াছিলাম-এই আরণ্য প্রকৃতিকে ধ্বংস করিতে আসিয়া এই অপূর্ব্বসুন্দরী বন্য নায়িকার প্রেমে পডিয়া গিয়াছি। এখন আমি ক্রমশ সে-দিন পিছাইয়া দিতেছি-যখন ঘোড়ায় চড়িয়া ছায়াগহন বৈকালে কিংবা মুক্তা শুভ্র জ্যোৎস্নারাত্রে এক বাহির হই, তখন চারি দিকে চাহিয়া মনে মনে ভাবি, আমার হাতেই ইহা নষ্ট হইবে ? জ্যোৎস্নালোকে উদাস আত্মহারা, শিলাস্তৃত ধূ-ধূ নির্জন বন্য প্রান্তর।!! কি করিয়াই আমার মন ভুলাইয়াছে চতুরা সুন্দরী ! কিন্তু কাজ যখন করিতে আসিয়াছি, করিতেই হইবে । মাঘ মাসের শেষে পাটনা হইতে ছটু সিং নামে এক রাজপুত আসিয়া হাজার বিঘা জমি বন্দোবস্ত লাইতে চাহিয়া দরখাস্ত দিতেই আমি বিষম চিন্তায় পডিলাম-হাজার বিঘা জমি দিলে তা অনেকটা জায়গাই নষ্ট হইয়া -ਣ সুন্দর বনকোপ, লতাবিতান নির্ম্মম ভাবে কাটা পড়িবে যে ! ছটু সিং ঘোরাঘুরি করিতে লাগিল- আমি তাহার দরখাস্ত সদরে পাঠাইয়া দিয়া ধ্বংসলীলাকে কিছু বিলম্বিত করিবার চেষ্টা করিলাম। േ একদিন লবটুলিয়া জঙ্গলের উত্তরে নাড়া বইহারের মুক্ত প্রাস্তরের মধ্য দিয়া দুপুরের পরে আসিতেছি-দেখিলাম, একখানা পাথরের উপর কে বসিয়া আছে পথের ধারে । তাহার কাছে আসিয়া ঘোড়া থামাইলাম। লোকটির বয়স ষাটের কম নয়, পরনে ময়লা কাপড়, একটা ছোড়া চাদর গায়ে । এ জনশূন্য প্রান্তরে লোকটা কি করিতেছে একা বসিয়া ? সে বলিল-আপনি কে বাৰু ?