পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

'Ob- अieyक হাজার বিঘা জমি। নাঢ়া বইহারের জমি অত্যন্ত উর্বর বলিয়া ঐ অংশেই দেড় হাজার বিঘা জমি এক সঙ্গে উহাদের দিতে হইয়াছে। সেখানকার প্রান্তরসীমার বনানী অতি শোভাময়ী, কতদিন সন্ধ্যাবেলা ঘোড়ায় আসিবার সময়ে সে বন দেখিয়া মনে হইয়াছে, জগতের মধ্যে নাঢ়া বইহারের এই বন একটা বিউটি স্পট-গোল সে বিউটি স্পট ! দূর হইতে দেখিতাম বনে আগুন দিয়াছে, খানিকটা পোড়াইয়া না ফেলিলে ঘন দুর্ভেদ্য জঙ্গল কাটা যায় না। কিন্তু সব জায়গায় তা বন নাই, দিগন্তব্যাপী প্রান্তরের ধারে ধারে নিবিড় বন, হয়ত প্রান্তরের মাঝে মাঝে বন-ঝোপ, কত কি লতা, কত কি বনকুসুম । • • • চট্ৰ চন্টু শব্দ করিয়া বন পুড়িতেছে, দূর হইতে শুনি-ক’ত শোভাময় লতাবিতান ধ্বংস হইয়া গেল, বসিয়া বসিয়া ভাবি । কেমন একটা কষ্ট হয় বলিয়া ওদিকে যাই না । দেশের একটা এত বড় সম্পদ, মানুষের মনে যাহা চিরদিন শান্তি ও আনন্দ পরিবেষণা করিতে পারিত-একমুষ্টি গমের বিনিময়ে তাহা বিসর্জন দিতে হইল। কাত্তিক মাসের প্রথমে একদিন জায়গাটা দেখিতে গেলাম। সমস্ত মাঠটিতে সরিষা বপন করা হইয়াছে-মাঝে মাঝে লোকজনেরা ঘর বাধিয়া বাস করিতেছে, ইহার মধ্যেই গরু-মহিষ, স্ত্রী-পুত্র আনিয়া গ্রাম বসাইয়া ফেলিয়াছে। শীতকালের মাঝামাঝি যখন সর্ষেক্ষেত হলুদ ফুলে আলো করিয়াছে, তখন যে দৃশ্য চোখের সম্মুখে উন্মুক্ত হইল, তাহার তুলস্থা নাই। দেড় হাজার বিঘা ব্যাপী একটা বিরাট প্রান্তর দূরদিশ্বলয়সীমা পর্য্যন্ত হলুদ রঙের গালিচায় ঢাকা- এর মধ্যে ছেদ নাই, বিরামনাই-উপরে নীল আকাশ,ইন্দ্রনীলমণির মত নীল- তার তলায় হলুদ-হলুদ রঙের ধরণী, যতদূর দৃষ্টি যায়। ভাবিলাম, এও একরকম মন্দ নয়। একদিন নূতন গ্রামগুলি পরিদর্শন করিতে গেলাম। ছটু সিং বাদে সকলেই গরিব প্রজা । তাহাদের জন্য একটি নৈশ স্কুল করিয়া দিব ভাবিলাম-অনেক ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে সর্ষেক্ষেতের ধারে ধারে ছুটিাছুটি করিয়া খেলা করিতে দেখিয়া আমার নৈশ স্কুলের কথা আগে মনে পড়িল ।