আরণ্যক ܘ ܓ& বাঙালীর কলমের উপর অসীম নির্ভরশীল। এই বন্য মেয়েটির নিকট সেদিন ষে অঙ্গীকার করিয়া আসিয়াছিলাম, আজ তাহা পালন করিলাম-জানি না। ইহাতে এত কাল পরে তাহার কি উপকার হইবে । এত দিন সে কোথায়, কি ভাবে আছে, বাচিয়া আছে কি না তাহাই বা কে জানে ? R শ্রাবণ মাস। নবীন মেঘে ঢল নামিয়াছে অনেক দিন, নাঢ়া ও লবটুলিয়াবইহারে কিংবা গ্র্যান্ট সাহেবের বটতলায় দাড়াইয়া চারি দিকে চাও, শুধুই দেখ সবুজের সমুদ্রের মত নবীন, কচি কাশবন । একদিন রাজা দোবারু পান্নার চিঠি পাইয়া শ্রাবণ-পূর্ণিমায় তার ওখানে ঝুলনোৎসবের নিমন্ত্রণ রক্ষা করিতে চলিলাম। রাজু ও মটুকনাথ ছাড়িল না, আমার সঙ্গে তাহারাও চলিল। হাটিয়া বাইবে বলিয়া উহার রওনা হইল। আমার আগেই । বেলা দেড়টার সময় ডোঙায় মিছি নদী পার হইলাম। দলের সকলোয় পায় হইতে আড়াইট বাজিয়া গেল । দলটিকে পিছনে ফেলিয়া তখন ঘোড়া | || ঘন মেঘ করিয়া আসিল পশ্চিমে। তার পরেই নামিল ঝম্ ঝিম বর্ষ। কি অপূর্ব বর্ষার দৃশ্য দেখিলাম সেই অরণ্য প্রান্তরে। মেঘে মেঘে দিগন্তের শৈলমালা নীল, থমকানো কালো বিদ্যুৎগর্ভ মেঘে আকাশ ছাইয়া আছে, কচিৎ পথের পাশের শাল কি কেঁদ শাখায় ময়ুর পেখম মেলিয়া নৃত্যপরায়ণ, পাহাড়ী ঝরণার জলে গ্রাম্য বালক-বালিকা মহা উৎসাহে শাল-কাটির ও বঙ্গ বীশের ঘুনি পাতিয়া কুচো মাছ ধরিতেছে, ধূসর শিলাখণ্ড ভিজিয়া কালো দেখাইতেছে, তাহার উপর মহিষের রাখাল কঁচা শালপাতার লম্বা বিড়ি টানিতেছে। শান্তস্তষ্ক দেশ-অরণ্যের পর অরণ্য, প্রান্তরের পর প্রান্তর, শুধুই ঝরণা, পাহাড়ী গ্রাম, মরুম-ছড়ানো রাঙা মাটির জমি, কচিৎ কোথাও পুপিত কদম্ব বা পিয়াল বৃক্ষ ।
পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০৯
অবয়ব