SS8 আরণ্যক করিতে অনুরোধ করিলাম। কিন্তু তাহারা রাজী হইলেন না। রাত্রি দশটার ট্রেনে কাটারিয়াতে উঠিয়া পুণিয়া আজই রাত বারোটায় পৌছিতে হইবে। না। ফিরিলে বাড়ীতে সকলে ভাবিবে, কাজেই থাকিতে অপারগ-ইত্যাদি । জঙ্গলের মধ্যে ইহাৱা এত দূর কেন পিকনিক করিতে আসিয়াছে তাহা বুঝিলাম না। লবটুলিয়া বাইহারের উন্মুক্ত প্রান্তর বনানী ও দূরের পাহাড়রাজির শোভা, সুর্য্যাস্তের রং, পাখীর ডাক, দশ হাত দূরে বনের মধ্যে ঝোপের মাথায় মাথায় এই বসন্তকালে কত চমৎকার ফুল ফুটিয়া রহিয়াছে’-এসবের দিকে ইহাদের নজর নাই দেখিলাম। ইহারা কেবল চীৎকার করিতেছে, গান গাহিতেছে, ছুটিাছুটি করিতেছে, খাওয়ার তরিবৎ কিসে হয় সে-ব্যবস্থা করিতেছে। মেয়েদের মধ্যে দুটি কলিকাতায় কলেজে পড়ে, বাকী দু-তিনটি স্কুলে পড়ে। ছেলেগুলির মধ্যে একজন মেডিকেল কলেজের ছাত্র, বাকীগুলি বিভিন্ন স্কুল-কলেজে পড়ে । কিন্তু প্রকৃতির এই অত্যাশ্চর্য্য সৌন্দর্য্যময় রাজ্যে দৈবাৎ যদি আসিয়াই পড়িয়াছে, দেখিবার চোখ নাই আদৌ। প্রকৃতপক্ষে ইহাৱা আসিয়াছিল শিকার করিতেখরগোস, পাখী, হরিণ-পথের ধারে যেন ইহাদের বন্দুকের গুলি খাইবার অপেক্ষায় বসিয়া আছে। যে মেয়েগুলি আসিয়াছে, এমন কল্পনার-লেশ-পরিশূন্য মেয়ে যদি কখনও দেখিয়াছি! তাহারা ছুটাছুটি করিতেছে, বনের ধার হইতে রান্নার জন্য কাঠ কুড়াইয়া আনিতেছে, মুখে বকুনির বিরাম নাই-কিন্তু একবার কেহ চারিধারে চাহিয়া দেখিল না যে কোথায় বসিয়া তােহাৱা খিচুড়ি রাধিতেছে, কোন নিবিড় সৌন্দর্য্যভিয়া বনানীপ্রান্তে । একটি মেয়ে বলিল -'টিন-কাটাবু টুকুবার বড় সুবিধে এখানে, না ? কত পাতারের মুড়ি ! আর একটি মেয়ে বলিল-উঃ কি জায়গা ! ভাল চাল কোথাও পাবার যে নেই-কাল সারা টাউন খুঁজে বেড়িয়েছি-কি বিশ্রী মোট চাল-তোমরা আবার বলছিলে পোলাও হবে!
পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২১৮
অবয়ব